শিক্ষা

শহরে স্কুলের বদলির আবেদনের হিড়িক।প্রাথমিক শিক্ষকরা গ্রামে থাকতে চান না

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনলাইনে বদলি চালু হলেও শর্তের কারণে বেশির ভাগ শিক্ষক আবেদনের সুযোগ পাননি। যাদের আবেদন করার সুযোগ আছে তাদের বেশিরভাগই শহরে যেতে চান। নারী শিক্ষকরা উপজেলা সদরে বা ভালো যোগাযোগের ব্যবস্হা এমন স্কুলে যাওয়ার জন্য বেশি আবেদন করেছেন।

সারাদেশে প্রায় চার লাখ প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক রয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে বদলির জন্য প্রায় ২৬ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। শিক্ষকরা বলছেন, বদলি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা কঠোর শর্তের কারণে বিপুলসংখ্যক শিক্ষক আবেদন করতে পারেননি। অতীতে কখনো এমন হয়নি।

তিন বছর পর গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইনে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। প্রথম ধাপে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করা হয়। পরে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, আবেদনের সংখ্যা কম হলেও সময় বাড়ানো হবে না। তিনি বলেন, নির্ধারিত সফটওয়্যারে আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করা হবে এবং ফলাফল ঘোষণা করা হবে। শহরের স্কুলে শিক্ষকদের আসার প্রবণতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা স্বাভাবিক।

জানা গেছে, নোয়াখালী সদর উপজেলায় ১৯৮টি পদের মধ্যে শতাধিক বিদ্যালয় শূন্য রয়েছে। এ উপজেলায় মাত্র ২০টি বিদ্যালয়ে বদলির আবেদন করেছেন ৫২৯ জন শিক্ষক। এর জন্য শর্তের জটিলতাকে দায়ী করেছেন বদলি হওয়া শিক্ষকরা। জেলা শহরের অরুণচন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুটি শূন্য পদে ৭৭ জন আবেদন করেছেন। একটি স্কুলের জন্য এত আবেদন দেখে শিক্ষকরা হতবাক। কারও কারও শহরে স্থায়ী ঠিকানা রয়েছে, কয়েকজন নারী শিক্ষক তাদের স্বামীর চাকরির জায়গায় বদলির জন্য অভ্যন্তরীণ-শহরের স্কুলে আবেদন করেছেন।

ঢাকাসহ দেশের সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষকদের (সিটি করপোরেশনের বাইরে থেকে) বদলি বন্ধ থাকায় আশপাশের পৌরসভা বা উপজেলা সদরের এক থেকে দুটি স্কুলে বদলির আবেদনের ভিড় দেখা গেছে।

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায় ৩১টি বদলির আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে পৌর এলাকার কচুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি শূন্য পদের বিপরীতে ২৩টি আবেদন এসেছে। পৌরসভা বা জেলা সদরে আবেদন বেশি হলেও অনেক উপজেলায় আবেদন অনেক কম। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় ১৬৫টি বিদ্যালয় থাকলেও বদলির আবেদন ৩৮টি। বদলি নীতিমালায় শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ১:৪০ শর্ত থাকায় এ উপজেলার অনেক শিক্ষক আবেদন করতে পারেননি।

যদিও নির্দিষ্ট কিছু স্কুলে অনেক বেশি বদলির আবেদন রয়েছে, সারা দেশে ৬৫,৬২০টি স্কুলে মোট ২৫,৭৩২টি আবেদন গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলায় আবেদন পড়েছে ৪ হাজার ৫৫৮টি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে ৭২ হাজার ৮১৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। এ বিভাগের ৯৪ শতাংশ শিক্ষক বদলির আবেদনের সুযোগ পাননি। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় ১২২টি বিদ্যালয় ও ৭৪৮ জন শিক্ষক রয়েছে। উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ২৪টি ও সহকারী শিক্ষকের ৭৮টি পদ শূন্য রয়েছে। এই পদগুলিতে বদলির জন্য ৪৫টি আবেদন রয়েছে। এর মধ্যে লতিফপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করেছেন চারজন।

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ৩১টি ও সহকারী শিক্ষকের ৫৫টি পদ শূন্য রয়েছে। দায়িত্বরত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ উপজেলায় আবেদনের সঠিক সংখ্যা বলতে রাজি হননি। তবে বেশিরভাগ আবেদনই রুদ্রগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানান্তরের জন্য। ঝালকাঠি সদরে ৩৯ জন সহকারী শিক্ষক ও ৩০টি প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে ৬৫ জন শিক্ষক আবেদন করেছেন। ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ৩২টি পদ শূন্য রয়েছে। তবে আদালতে মামলা থাকায় ১৯টি পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাকি ১৩টি শূন্যপদে আবেদন করেছেন সাতজন। এ উপজেলায় সহকারী শিক্ষকের ২০টি শূন্য পদে ২০ জন আবেদন করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি স্কুল একাধিক আবেদন পেয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সফটওয়্যারে শিক্ষকের বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব, স্থায়ী ঠিকানা, বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা এবং স্বামী বা স্ত্রীর কর্মস্থল স্কোর করে শিক্ষক বদলির আবেদনপত্র গ্রহণ করা হবে।

তবে বদলি নীতি সহজ করার দাবি করছেন শিক্ষকরা। আবেদনকারীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নোয়াখালী সদরের অরুণ চন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, এত শিক্ষক আবেদন করবেন তা জানলে তিনি এখানে আবেদন করতেন না। কর্তৃপক্ষ আবেদন করার সময় সফ্টওয়্যারে স্বয়ংক্রিয় নির্দেশনা দিতে হবে – কোন স্কুলে কতজন আবেদন করেছেন এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে স্কোরও দিতে হবে। তাহলে একটি শূন্যপদে অনেক আবেদন পাওয়া যাবে না।

Leave a Reply