• বাংলা
  • English
  • অর্থনীতি

    জ্বালানির মূল্য পরিশোধে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে

    জ্বালানির মূল্য পরিশোধে সরকারের ওপর দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলোর চাপ বাড়ছে। দ্রুত মূল্য পরিশোধের জন্য ব্যাচে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। সর্বশেষ, গতকাল রবিবার আদানি পাওয়ার তাদের বকেয়া পরিশোধের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দিয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন ও এলএনজি সরবরাহকারী কাতার গ্যাসও সরকারকে চিঠি দিয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্য পরিশোধের চাপও রয়েছে। তবে সূত্রমতে, জ্বালানি তেল আমদানিতে কিছুটা স্বস্তিতে বিপিসি। তাদের আর্থিক সংকট না থাকলেও ডলারের সংকট মোকাবিলায় প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকায় সহজে এলসি খোলা হচ্ছে না।

    বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভারতের আদানি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড তাদের একটি চিঠিতে সতর্ক করেছে যে তারা যদি পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্টে (পিপিএ) নির্ধারিত সময়ের পরে অর্থ প্রদান করে তবে তাদের বকেয়া পরিমাণের উপর সারচার্জ দিতে হবে। ফলস্বরূপ, আদানিকে এই বছরের জুনের মধ্যে অতিরিক্ত ৮৪৫ মিলিয়ন ডলার দিতে হবে।

    সূত্র জানায়, রোববার বিদ্যুৎ বিভাগকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যানের কাছে বিল উত্থাপন করেছে আদানি পাওয়ার। আদানির বকেয়া পরিশোধে বিলম্ব এবং জটিলতার কারণে কোম্পানিটি ইতিমধ্যেই ঝাড়খণ্ডে তার ১.৬০০ মেগাওয়াট কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ করে দিয়েছে।

    আদানি বলছে যে পিডিবি যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাসিক চালানের বিল পরিশোধ করে, তাহলে জানুয়ারী থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত সময়ের জন্য পেমেন্টের উপর সারচার্জ প্রত্যাহার করা হবে। আদানির পক্ষে কৃষ্ণা রাও লিখেছেন- পিডিবি তাদের প্রস্তাবিত সময়ের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ করুক। তাহলে উভয় পক্ষের জন্যই ভালো। আদানি ৮ জুন, ২০২৩ থেকে ৬ জানুয়ারী, ২০২৫ এর মধ্যে সমস্ত বকেয়া পরিশোধ করার অনুরোধ করেছে।

    প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে গত ৯ জানুয়ারি আদানি পাওয়ারের কর্মকর্তা ও পিডিবির মধ্যে বৈঠক হয়। পিডিবি ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পিডিবির চেয়ারম্যান রেজাউল করিম মিডিয়াকে বলেছেন যে আদানির বকেয়া পরিশোধের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ এবং অর্থ বিভাগের সাথে ধারাবাহিক বৈঠক চলছে। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।

    এদিকে গ্যাস বিক্রির জন্য মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরনের কাছে পেট্রোবাংলার পাওনা প্রায় ২২০ মিলিয়ন ডলার। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ পরিশোধের অনুরোধ জানিয়ে বৃহস্পতিবার জ্বালানি বিভাগে চিঠি দেয় প্রতিষ্ঠানটি। চিঠিতে বলা হয়েছে যে অন্তত ৭৫ মিলিয়ন ডলার জরুরিভাবে পরিশোধ করা দরকার।

    একই দিনে, জ্বালানি বিভাগ কাতারের রাস লাফান লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (কাতার গ্যাস বা কাতার এনার্জি নামে পরিচিত) থেকে আরেকটি চিঠি পেয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির অধীনে বাংলাদেশে এলএনজি বিক্রির জন্য কোম্পানিটির পাওনা $১৫০ মিলিয়ন। চিঠিতে দ্রুত বকেয়া পরিশোধেরও দাবি জানানো হয়েছে। মোট $৩৭০ মিলিয়নের দুটি চিঠির কপি ইতিমধ্যে পেট্রোবাংলাকে পাঠানো হয়েছে।

    শেভরনকে তার বকেয়া পরিশোধের অনুরোধ জানিয়ে শেভরন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও এমডি এরিক এম ওয়াকার স্বাক্ষরিত চিঠিটি। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো চিঠির তথ্য অনুযায়ী, শেভরন পেট্রোবাংলার কাছে গ্যাস বিক্রি করে মোট $২২ কোটি টাকা জমা করেছে। এর মধ্যে বিক্রিত গ্যাসের মূল্য ১৭৫ মিলিয়ন ডলার এবং বাকি ৪৫ মিলিয়ন ডলার ভ্যাট ও সুদ হিসেবে জমা হয়েছে।

    শেভরন প্রতি মাসে প্রায় ৪ কোটি ডলারের বিল পায়। কয়েক মাস ধরে শেভরনের বিল জমা হচ্ছে। গত ডিসেম্বরে শেভরন ইন্টারন্যাশনাল এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ক্যাসুলো বাংলাদেশ সফর করেন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

    ওই বৈঠকে বকেয়া বিল নিয়েও আলোচনা হয়। দেশে গ্যাস সরবরাহের ঘাটতি মেটাতে, এপ্রিল ২০১৮ থেকে কাতার গ্যাস থেকে কার্গোতে এলএনজি আমদানি করা হয়েছে। কোম্পানিটি প্রতি বছর গড়ে ৪০টি কার্গো এলএনজি সরবরাহ করে। চলতি অর্থবছরে কাতার থেকে মোট ৪০টি কার্গো এলএনজি আমদানি করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে অর্ধেকই দেশে এসেছে। এদিকে বিপিসি সূত্র বলছে, তেলের বকেয়া বিল পরিশোধে তারা আগের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে।

    Do Follow: greenbanglaonline24