• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    মাদারীপুরে প্রণোদনার পেঁয়াজের বীজ ফুটেনি

    মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের বলাইকান্দি গ্রামের কৃষক মোশাররফ বেপারী। তিনি তার ৩৩ শতাংশ জমিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এক কেজি পেঁয়াজের বীজ রোপণ করেছেন। বিনামূল্যে বীজ পাওয়া সত্ত্বেও চাষ করতে তার আরও ৪০,০০০ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বীজ থেকে কোনো চারা গজায়নি। তাই লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে আবার চাষ শুরু করতে বাধ্য হন তিনি।

    শুধু মোশাররফ নন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পেঁয়াজের বীজ বপন করে লোকসানের মুখে পড়েছেন জেলার প্রায় ছয় শতাধিক কৃষক।

    একই গ্রামের আরেক কৃষক বাচ্চু বেপারী বলেন, “আমি আমার ২০ শতাংশ জমিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পেঁয়াজের বীজ বপন করেছি। কিন্তু চারা গজায়নি। পুরো জমি এখন ঘাসে ঢাকা। যেহেতু আমার ক্ষেত একটি চৌকিতে রয়েছে।” অন্যের জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে নতুন ফসল চাষ করতে পারি এমন কোনো অবস্থা নেই এ বছর আমার জমি খালি পড়ে আছে ঋণের টাকা কিভাবে শোধ করব ভেবে ঘুম আসছে না, মতিউর সরদার আসকরানী নামে আরেক কৃষক বলেন, আমি প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করে সরকারি পেঁয়াজ লাগিয়েছি।

    আমার সব টাকা ড্রেনের নিচে চলে গেছে। একটি বীজও জন্মেনি।” মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত নভেম্বর মাসে বারি-১, বারি-৪ ও তাহেরপুরি পেঁয়াজ বীজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও চুক্তিবদ্ধ গ্রস কৃষকদের মাধ্যমে কেনা হয়েছে ৭ কোটি টাকা। যা বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। বৃহত্তর ফরিদপুরের ৫ জেলার মধ্যে ১০ হাজার ৮২০ জন কৃষককে এই বীজ দেওয়া হয়েছে দুই মাস ধরে জমিতে চারণের পরিবর্তে ঘাস ও লতা-পাতা জন্মেছে।

    ঠিকাদারদের মাধ্যমে নিম্নমানের বীজ সংগ্রহ ও বিতরণের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে কৃষকদের অভিযোগ। স্থানীয় কিছু ঠিকাদারি চাষি ও বিএডিসি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কোনো ল্যাব টেস্ট ছাড়াই নিম্নমানের বীজ সরবরাহ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে বীজ অঙ্কুরিত হয়নি।

    মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সন্তোষ চন্দ্র চন্দ বলেন, “আমরা বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের দেওয়া পেঁয়াজের বীজ ৬০০ জনেরও বেশি কৃষককে বিনামূল্যে দিয়েছি। কিন্তু দেখা গেছে যে ৫২৭টি জমিতে কোনো চারা জন্মেনি। পরবর্তীতে, আমরা আমাদের কৃষি বিভাগ থেকে ৫২৭ জন কৃষককে আধা কেজি পেঁয়াজের বীজ দিয়েছিলাম। তবে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ ব্যাখ্যা করতে পারবে কেন কৃষকের জমিতে বীজ জন্মায়নি আমরা শুধু তাদের বীজ এনেছি।

    এদিকে ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় একটি কমিটি গঠন করেছে। তবে নিম্নমানের বীজ সরবরাহের বিষয়ে বিএডিসির ফরিদপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক সায়েম মল্লিক দায়িত্বশীল জবাব দিয়ে বলেন, আমাদের কাছে যে বীজ সরবরাহ করা হয়েছিল তা আমরা কৃষকদের দেওয়ার জন্য ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়েছি। কেন তা অঙ্কুরিত হয়নি তা প্রধান কার্যালয় আরও ভালভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে।”

    এদিকে বীজ সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজের প্রধান রফিকুল ইসলাম মুক্তা বলেন, আমরা যখন বীজ সংগ্রহ করি তখন বিএডিসি কর্মকর্তারা আমাদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাব পরীক্ষার জন্য পাঠান। পরীক্ষার পর বিএডিসি কর্মকর্তারা সার্টিফিকেট দেন যে আমাদের বীজ ভালো। এর পরে, আমরা সরকারকে বীজ সরবরাহ করি।”

    মাদারীপুর ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রিপন চন্দ্র মল্লিক বলেন, “সরকার কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় সরাসরি এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে, তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেট স্বল্প খরচে অর্থের অপব্যবহার করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। -সুতরাং এই প্রকল্পের অনিয়মের তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা জরুরি।”

    Do Follow: greenbanglaonline24