মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন,বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ওপর এর প্রভাব কী?
আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা তাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বেছে নেবেন। বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী এই দেশের নেতৃত্বের পরিবর্তন বিশ্বের অন্যান্য দেশেও প্রভাব ফেলে। বৈদেশিক নীতি থেকে অভিবাসন থেকে অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে, কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, পুরো বিশ্বের চোখ রয়েছে প্রার্থীদের মতামতের দিকে। বাংলাদেশও এবারের নির্বাচনের ফলাফল দেখছে। কারণ, দেশটির পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন হলে তা বাংলাদেশ-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের পরিবর্তন হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সম্প্রতি ট্রাম্প এক টুইটে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের তীব্র নিন্দা করেছেন। তার এ মন্তব্য নিয়ে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কি চাপে থাকবে? টুইটের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন আবার ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আরও কঠোর হতে পারে। অন্যরা বলছেন যে, প্রেসিডেন্ট যেই হোন না কেন, মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি সাধারণত নির্দিষ্ট কাঠামো এবং নীতি নির্দেশিকাগুলির অধীনে পরিচালিত হয় যা খুব বেশি পরিবর্তন করে না।
ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস নির্বাচিত হলে বাংলাদেশ-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ইতিবাচকভাবে চলতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি মূলত কংগ্রেস, প্রতিরক্ষা বিভাগ এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাহায্যকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রভাবের ওপর নির্ভরশীল।
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই নীতির আওতায় বিভিন্ন দেশের ওপর নতুন বাণিজ্য নীতি আরোপ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্যও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। একই সময়ে, সংখ্যালঘু ইস্যুতে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য থেকে বোঝা যায় যে তিনি পুনরায় নির্বাচিত হলে মানবাধিকার ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেন।
সম্প্রতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী হতে পারে। ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কার ও মানবাধিকার সুরক্ষা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে ।
যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে অভিবাসন নীতির পরিবর্তন বাংলাদেশি অভিবাসী ও শিক্ষার্থীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হলে রোহিঙ্গাদের জন্য মার্কিন অর্থায়ন কঠিন হতে পারে। তবে ব্যবসায় খুব বেশি প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল বাংলাদেশের জন্য বড় কোনো চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে না। তিনি বলেন, দুই দলের (রিপাবলিকান পার্টি ও ডেমোক্রেটিক পার্টি অব যুক্তরাষ্ট্র) সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের সুসম্পর্ক রয়েছে। প্রেস সচিব আরও বলেন, সম্পর্কের অনেকটাই নির্ভর করে ব্যক্তিগত যোগাযোগের ওপর। ডাঃ ইউনূস একজন বিশ্বনেতা। তাই যেই নির্বাচিত হোক না কেন, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে কোনো সমস্যা হবে না।