কেএসআরএম-এর কাছে অসহায় পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম।
কেএসআরএম জরিমানা দিয়ে আবার পাহাড় কাটা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা কথা রাখেননি। নিয়মিত পাহাড় কাটা হচ্ছে, কিন্তু আবার পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সেখানে যেতে দিচ্ছেন না। ফলে পাহাড় কাটা বন্ধে অভিযানে গেলেও গেট থেকে ফিরে আসতে হয় অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের। যদিও পরে গ্রূপের শীর্ষ কর্মকর্তারা ভুল স্বীকার করেন। বাস্তবতা হলো তারা একই ভুল বারবার করে যাচ্ছে। অতীতে একাধিকবার এমন আচরণ সহ্য করলেও এবার ছাড় দিতে নারাজ পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল।
সর্বশেষ গত ২৬ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে একটি দল চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার বারবাকুন্ড-ইউনিয়নের কারখানা পরিদর্শনে যান। কারখানার ভেতরে পাহাড় কেটে সমতল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ প্রেক্ষিতে তদন্তে যান তারা। পরিবেশ আইনে কারখানায় ঢোকার অধিকার আছে, কিন্তু ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কেএসআরএম-এর নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীরা দাবি করেছেন যে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ। পরিবেশ কর্মকর্তারা নিরাপত্তা কমীর দুর্ব্যবহারের কারণে কয়েক ঘণ্টা দাড়িয়ে অপমানিত হয়ে ফিরতে হয়েছে। তাই পরিবেশ অধিদপ্তর এবার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে এর আগে গত বছরের ১৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ছুটির দিনে পাহাড় কাটছিল কেএসআরএম। খবর পেয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম দেখতে গেলে তাকে সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এরপর আরও কয়েক দফা অভিযানকারী দলকে সেখানে পাঠানো হয়। সর্বশেষ ২৬ ডিসেম্বর উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ারের নেতৃত্বে কয়েকজন কর্মকর্তা সেখানে গিয়েছিলেন।
ফেরদৌস আনোয়ার প্রতিবেদককে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের মুখে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। কারখানার চিফ সেফটি অফিসারের ছদ্মবেশে এক ব্যক্তি আমাদের প্রবেশ করতে বাধা দেয়। পরে অনুমতি নিতে আমাদের অপেক্ষায় রেখে অফিসে যান, কিন্তু তিনি আর ফিরে আসেননি। পরে আমরা এডমিন অফিসার নাজিউর রহমানকে তার মোবাইলে কল করলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আসতে বলেন।
সেদিনের ঘটনার একটি ভিডিও এবং নাজিউর রহমানের সঙ্গে কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড আমাদের হাতে এসেছে। সেখানে পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়- আমরা আপনার গেটে দাঁড়িয়ে আছি। বুঝলাম, স্যার, একটু উচ্চ ম্যানেজমেন্ট থেকে অনুমতি নিয়ে আসুন। ওই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কি অনুমতি নিতে হবে, অনুমতি নিতে আইনে কী বলা আছে?
উপ-পরিচালক বললেন, আমরা কি এখানে ঢুকতে পারি? সেই ব্যক্তির উত্তর- আপনি পারবেন না, স্যার। স্যার পারেন তবে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি কোনো যুক্তি মানতে রাজি নন।
ঘটনার পর কর্মকর্তারা ফিরে আসলে কেএসআরএম-এর সিইও মেহেরুল করিম ফোন করে ভুল স্বীকার করে তাকে দেখার আমন্ত্রণ জানান।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম বলেন, ঘটনার পর তারা সব সময় ভুল স্বীকার করলেও পরে একই কাজ করেন। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপ-পরিচালক বলেন, পরিদর্শনের জন্য সরকারি চিঠি দিয়েছি। সুত্র-আমাদের সময়।