• বাংলা
  • English
  • রাজনীতি

    আশুলিয়ায় গুলিদ্ধি ৪৬টি লাশ পোড়ানোর ‘সেই পুলিশ গ্রেফতার

    আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ৪৬ জনকে গুলি করে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ‘মাস্টারমাইন্ড’ আশুলিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সৈয়দকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

    গতকাল বুধবার রাতে তাকে কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করে ঢাকায় আনা হয়। বর্তমানে সৈয়দকে শাহবাগ থানায় রাখা হয়েছে।

    বৃহস্পতিবার সৈয়দকে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল।

    জানা গেছে, গ্রেফতারের ভয়ে দীর্ঘদিন আত্মগোপন করে ছিলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আশুলিয়ার ঘটনায় নিজের দায় এড়াতে নানা কৌশল অবলম্বন করলেও শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি তার।

    পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সৈয়দ যে কোনো মুহূর্তে অবৈধভাবে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করেছিলেন কারণ তিনি নিজেকে আড়াল করার জন্য অনেক কৌশলের চেষ্টা করেছিলেন। অভিবাসনসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। এ কারণে গতকাল রাতে তাকে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

    উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি খুলনা মহানগরীর ৪ নম্বর মিয়াপাড়া মহল্লায় এসআই (নিরস্ত্র) পদে পুলিশে যোগদানকারী আ ফ ম সৈয়দ। ইসমাইলের ছেলে।

    প্রসঙ্গত, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। পরে ওইদিন বিকেলে লাশের স্তূপে আরও লাশ তুলে  এবং পড়ে বেশ কয়েকটি ভিডিও প্রকাশ্যে এলে  সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

    জানা গেছে, ওই ভয়াবহ ও নারকীয় ঘটনার পরিচালক হিসেবে সরাসরি অংশ নেন ওসি সৈয়দ। এ সময় তিনি সিভিল ড্রেসে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার পরনে ছিল নীল পোলো শার্ট, কালো প্যান্ট। এক হাতে ব্যান্ডেজ। ট্রাউজারের পকেটে একটা ওয়ারলেস সেট ছিল। প্রচণ্ড উত্তেজনায় একের পর এক সিগারেট সেবন করেন।

    ওই দিন প্রত্যক্ষদর্শী ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর ও কনস্টেবল পদমর্যাদার চার পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, লাশ ভ্যানে তোলার আগে যা ঘটেছিল তার সবকিছুর দায়িত্বে ছিলেন আশুলিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সৈয়দ।

    তার নির্দেশে আশুলিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরাফাত উদ্দিন ও আশুলিয়া থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মনির লাশ নিষ্ক্রিয় করার জন্য পেট্রোল সংগ্রহ করেন। প্লাস্টিকের বোতলে পেট্রোল আনা হয়েছিল। ৩টি ধাপে গাড়িতে পেট্রোল ছিটানো হয়।

    আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৪৬ জনকে গুলি করে হত্যার পর লাশ পোড়ানোর ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী, ২১ পুলিশসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৩৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।