• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ৭০ ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে মসলার বাজার

    ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে আবারও উত্তপ্ত হচ্ছে মসলার বাজার। আদা, রসুন, জিরা, হলুদ, মরিচ, দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, জৈত্রীসহ সব মসলার চাহিদা বাড়ছে। আর এর সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয়েছে কিছু ব্যবসায়ী। মসলার বাজারে পাঁচ শতাধিক আমদানিকারক থাকলেও মূল্য নিয়ন্ত্রণ মূলত ৭০ জনের হাতে। আমদানিকৃত মসলার বেশির ভাগই তাদের গুদামে রয়েছে।

    মসলার বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমদানিনির্ভর মসলার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন গুটিকয়েক ব্যবসায়ী। ৭০ থেকে ৮০ ব্যবসায়ীর নির্দেশে মসলার দাম বাড়তে থাকে।

    জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “পেঁয়াজ আমদানির অনুমতির পর দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। অন্য মসলার দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে। কেউ কারসাজি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী ও শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছায়েদ ছগির আহমদ বলেন, ঈদের আগে মসলার বাজার একটু বাড়তি। ভেজাল মসলা আমদানি বন্ধ হলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হতো। এখন বাজারে নকল এবং আসল উভয় ব্যবসায়ীর পণ্য রয়েছে। ভেজালের দাম ধরে রাখতে না পেরে কিছু প্রকৃত ব্যবসায়ী অসাধু পন্থা অবলম্বন করে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মন্ত্রণালয়কে দীর্ঘ মেয়াদে এসব বিষয়ে কাজ করতে হবে।

    মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন মসলার বাজারে অস্থিতিশীলতা তুলে ধরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে কে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে এবং কিভাবে। কোন পণ্যের বাজার কত বড়, আমদানি মূল্য, ব্যবসায়ীদের বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া এতে তুলে ধরা হয়েছে।

    জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের কিছু ব্যবসায়ী প্রধান মসলার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। কেউ সরবরাহ কমিয়ে দিচ্ছেন, কেউ পণ্য পরিবর্তন করে দাম বাড়াচ্ছেন। তারা এসব ছবি দেখিয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠায়। ঈদের আগে পাইকারি ও খুচরা স্থানে অভিযান জোরদার করা হবে বলেও জানান তিনি।

    দেশের জনসংখ্যা এবং তাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মসলার বাজার বাড়ছে। আমদানিনির্ভর এই বাজারে নতুন ব্যবসায়ীর সংখ্যা নগণ্য। পুরনো আমদানিকারকরা বিদেশ থেকে পণ্য আনছেন।

    দেশে তিনটি সমুদ্রবন্দর থাকলেও সবচেয়ে বেশি মসলা আমদানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। টেকনাফ, বেনাপোলসহ কয়েকটি স্থলবন্দর দিয়েও মসলা পণ্য আসছে। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার রসুন দেশে আনা হয়। প্রতি বছর ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকার এলাচ আসে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার পেঁয়াজ আসে। তবে আমদানি বহাল থাকলে স্থলবন্দর দিয়ে ২০ কোটি টাকার বেশি পেঁয়াজ আসে। দারুচিনি, লবঙ্গ, হলুদ, গোলমরিচ, জৈত্রীসহ সব ধরনের মসলার দাম হবে ৯০০ কোটি টাকার বেশি।

    রসুনের শীর্ষ ২০ আমদানিকারক চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা পেঁয়াজের শীর্ষ আমদানিকারকদের মধ্যে রয়েছে একে ট্রেডিং, সুরমা টেপ, মক্কা এন্টারপ্রাইজ, জেনি এন্টারপ্রাইজ এবং এনএন এন্টারপ্রাইজ। যে চারটি কোম্পানি সবচেয়ে বেশি আদা আমদানি করে সেগুলো হলো বগুড়ার মিশু ট্রেডিং, ঢাকার ট্রিটি ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং, বগুড়ার বিকে ট্রেডার্স এবং ঢাকার ভাই ভাই বানিজলয়। সব মিলিয়ে এ বছর এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ কোটি টাকার আদা এসেছে। বছরের শেষ নাগাদ তা ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকায় পৌঁছাবে।

    এ বছর এ পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ টন এলাচ এসেছে। তাদের মূল্য কমেছে ১৭০ কোটি টাকা। তিনটি কোম্পানি সবচেয়ে বেশি এলাচ আমদানি করেছে। তারা সবাই চট্টগ্রামের বাসিন্দা। সব মিলিয়ে প্রতি বছর প্রায় ৩০০ কোটি টাকার এলাচ দেশে আসে। মসলার মধ্যে জিরা, দারুচিনি, হলুদ, মরিচ ও জয়ত্রীতে প্রতি বছর ৩০০ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়।