আইএমএফের শর্ত প্রতিফলিত হবে,আজ জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করা হবে
দেশটির অর্থনীতি বেশ কিছুদিন ধরেই চাপে রয়েছে। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশি। সংকটে পড়েছে রপ্তানি খাত। প্রবাসী আয় কমে যায়। ডলারের সঙ্কটের মধ্যেও রুপির দরপতন অব্যাহত রয়েছে। গত এক বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে। রাজস্বও আপ টু দ্য মার্ক নয়। এদিকে সামনে জাতীয় নির্বাচন। একটি রাজনৈতিক সরকারের নির্বাচনী চিন্তা আছে। অন্যদিকে বাজেটের ওপর আইএমএফের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। আইএমএফের ৪৭০ কোটি ঋণের শর্ত পূরণের জন্য বাজেটে সংস্কারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এই পদক্ষেপগুলি অনেক ক্ষেত্রে জনপ্রিয় নাও হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে আজ বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পরিকল্পনার কথা জানাবেন তিনি। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য তিনি যে পদক্ষেপগুলি ঘোষণা করবেন তার অনেকগুলি আইএমএফের শর্তের সাথে সম্পর্কিত।
অর্থমন্ত্রী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট ঘোষণা করবেন। ‘দেড় দশকের উন্নয়ন অগ্রগতির দিকে’ শীর্ষক বাজেট বক্তৃতায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখাসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারসাম্য রক্ষায় সরকারের কৌশল তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রী। সংস্কারের ঘোষণা আছে।
মোটাদাগকে সাড়ে তিন বছরের জন্য ৩৮টি শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। এর প্রায় অর্ধেক আগামী অর্থবছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। আইএমএফের দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কর নীতি ও কর প্রশাসনের সংস্কার এবং প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ। সংস্কারের অংশ হিসেবে, চলতি বাজেট অধিবেশনেই পাসের জন্য নতুন আয়কর আইন আনা হবে।
আইএমএফের দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে একটি হলো আগামী অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ০.৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এ ছাড়া আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এনবিআরকে আয়কর আইন সংশোধন, শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ইউনিট গঠন করতে হবে।
আইএমএফ বলছে, মোট দেশীয় ঋণের এক-চতুর্থাংশের বেশি সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া যাবে না। এটি সঞ্চয়কারীদের উপর প্রভাব ফেলবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আন্তর্জাতিক মূল্যের সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। সরকার আইএমএফের অনুরোধের সময়ের মধ্যে এসব শর্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় এসব বিষয় উল্লেখ করতে পারেন।
আওয়ামী লীগের তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর আগামী অর্থবছরের বাজেট পঞ্চম বাজেট। একইসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি পঞ্চম বাজেট। আওয়ামী লীগ সরকারের আগের দুই মেয়াদে ১০টি বাজেট দিয়েছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ বাজেট হওয়ায় এবারের বাজেটে রয়েছে ভিন্ন মাত্রা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবারের বাজেটের মূল দর্শন ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। বর্তমান সরকারের অধীনে গত দেড় দশকে দেশের অর্জন একটি টেকসই ভিত্তি তৈরি করেছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে চারটি মূল স্তম্ভ- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি এবং স্মার্ট ইকোনমি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট হবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পথে প্রথম বাজেট। এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সারা অর্থবছরে সরকারের বিভিন্ন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি থাকবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হচ্ছে। বাজেটে এমন কিছু জন-সন্তুষ্টিমূলক ব্যবস্থা থাকবে।
আইএমএফ সঠিকভাবে বাজেট কমাতে চাইলে সরকার ভর্তুকি কমানোরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ কারণে গ্যাস-বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতির প্রভাবে চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি বছরের বকেয়া মেটাতে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণের বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং আরও বেশি করে টাকা দিতে হবে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে করা হয় ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা।
আগামী বাজেটে ভর্তুকির একটা বড় অংশ চলে যাবে চলতি অর্থবছরের বিদ্যুতের দায় মেটাতে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বরাদ্দ ছিল ১৭ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগ এ খাতে ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভর্তুকি দাবি করার পর সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়। আগামী বাজেটে এ খাতে ৩৩ হাজার কোটি টাকা রাখা হচ্ছে।