মাজসমুদ্রে রূপপুরের পণ্য খালাস রুশ জাহাজের
রাশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ উরসা মেজর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সরঞ্জাম আনলোড করেছে। জাহাজটি ১৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে কার্গো ছাড়তে শুরু করে, যা সোমবার শেষ হয়। পররাষ্ট্র ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশের বন্দরে জাহাজটি ঢুকতে দেয়নি। এবং রাশিয়াও পণ্যগুলি খালাসের জন্য এক প্রকার জোর দিয়েছিল। অবশেষে ভূমধ্যসাগর থেকে জাহাজের মালামাল বাংলাদেশের পতাকাবাহী ফিডার জাহাজে করে মংলা বন্দরে আনা হয়। যে কোনো সময় জাহাজটি বঙ্গোপসাগর ছেড়ে যাবে। আর জাহাজটি খালাসের পর মস্কো বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে।
বুধবার রাতে গ্লোবাল শিপ ট্র্যাকিং ইন্টেলিজেন্স মেরিন ট্রাফিক ওয়েবসাইটের সর্বশেষ আপডেট অনুসারে জাহাজটি এখনও বঙ্গোপসাগরে রয়েছে। তবে কোথায় যাবে, গন্তব্য ঠিক করেননি তিনি।
রুশ পতাকাবাহী উরসা মেজর নামের জাহাজটি রূপপুর থেকে পণ্য নিয়ে ২৪ ডিসেম্বর মংলা বন্দরে আসার কথা ছিল। তবে ২০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জানায়, জাহাজটি আসলে ‘উর্সা মেজর’ নয়। এটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় স্পার্টা ৩’ জাহাজ। রং ও নাম পরিবর্তন করে তাদের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা জাহাজটি রূপপুর থেকে পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে আসছে। যাচাই-বাছাই শেষে বাংলাদেশ বিষয়টি নিশ্চিত করে এবং জাহাজটিকে বন্দরে প্রবেশে নিষেধ করে। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকা ৬৯টি জাহাজের তালিকা দিয়েছে।
বাংলাদেশে খালাস করতে না পেরে জাহাজটি ভারতের বন্দরে পণ্য খালাসের চেষ্টা করে। সেখানেও ব্যর্থ হয়ে, জাহাজটি ১৫ জানুয়ারী চীনের সায়ন্থো বন্দরে তার গন্তব্য নির্ধারণ করে, তবে সেটিও পরিবর্তন করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ভুলটা বাংলাদেশের হয়েছে। ডিসেম্বরে চার্টার জাহাজের আগমনের অন্তত দুই মাস আগে, রাশিয়া বন্দরে কার্গো আনলোড করার ছাড়পত্র পেয়েছিল। তখন সম্পূর্ণ যাচাই-বাছাই ছাড়াই অনুমতি দেওয়া হয়। যখন এটি বন্দরে পৌঁছায়, ঢাকা জাহাজটিকে বোর্ডিং করতে নিষেধ করে। শুরুতে এটা করা হলে পরিস্থিতি এতটা ঘোলাটে হতো না। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে জাহাজটি নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে বলে তথ্যও গোপন করে রাশিয়া।
গত মঙ্গলবার, রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে রোডেনকো মস্কোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে তলব করে ৬৯টি রাশিয়ান জাহাজকে আসতে বাধা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। এ সময় রাষ্ট্রদূতকে রাশিয়ার অসন্তোষের কথা জানানো হয়। দেশটির মন্ত্রী রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চান জাহাজটিকে নোঙর করতে না দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ তৃতীয় কোনো পক্ষের চাপ পেয়েছিল নাকি স্বেচ্ছায় করেছে।
এক বিবৃতিতে রাশিয়া বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে বলেছে যে ঢাকার পদক্ষেপ ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এটি বিভিন্ন সম্ভাব্য সহযোগিতাকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ড. শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আমাদের রাষ্ট্রদূতের কাছে বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছি। সেখানে কী আলোচনা হয়েছে তা বিশ্লেষণ করব। শুধু সাবপোনা ইস্যুই নয়, এখানে আরও কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নীতিগত দৃষ্টিকোণ থেকে জাতিসংঘে ভোটের প্রক্রিয়া ঠিক কী হওয়া উচিত বাংলাদেশ তা করেছে। আমরা শীঘ্রই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আরেকটি প্রস্তাব বিবেচনা করছি। তবে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে আপনাকে আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) বৈঠকের বিষয়ে জানাব।
গত ডিসেম্বরে রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞার পণ্য খালাসের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে সতর্ক করা হয়। আর ঢাকার রুশ দূতাবাস ঢাকাকে বলেছে, জাহাজের মালামাল খালাস না হলে দুই দেশের সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাশিয়ার এমন আচরণ ইচ্ছাকৃত। এতগুলো জাহাজ থাকার পরও কেন নিষিদ্ধ জাহাজে মালামাল পাঠাতে হবে? এখন জাহাজের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে রূপপুরের টাকার কিস্তি চাইছে মস্কো। বাংলাদেশ টাকা পরিশোধ করবে, কিন্তু ঢাকা চায় পরিশোধের নিরাপদ উপায়। মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশ ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লেনদেন করবে না। কারণ, ইউক্রেন সংকটের পর রাশিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর আর্থিকসহ একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।