চট্টগ্রামে ফাঁড়িতে হামলা ছিনিয়ে নিল আসামি
চট্টগ্রামে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে মাদক মামলার দুই আসামিকে নিয়ে গেছে তার সহযোগীরা।এ সময় গুলিতে নাজমা আক্তার নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। শনিবার রাতে নগরীর কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ২১৬ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে আটজনকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ইয়াছিন আরাফাত নগরীর চান্দগাঁও থানার ৯ নম্বর রেল বিট এলাকার বাসিন্দা। সবার কাছে তিনি তৃতীয় লিঙ্গের বিজলী রানী নামে পরিচিত। এলাকায় তৃতীয় লিঙ্গের লোকজনের বাহিনী গঠন করে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে বিজলী। মূলত তার ভাই মোহাম্মদ হানিফকে সামনে রেখে অপরাধ জগত কাঁপিয়ে দেন। তাদের বোন নাজমা আক্তার ও বাবা লোকমান হোসেনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। দুই বছর আগে হানিফ গ্রেপ্তার হলে তার সহযোগীরা র্যাবের ওপর হামলা করে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এর পর গত বছর পুলিশের অভিযানে একই মাদক ব্যবসায়ীদের হামলার শিকার হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার রাতে রেলওয়ে এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসার খবর পেয়ে পুলিশ হানিফ ও তার সহযোগীদের ৫ হাজার ইয়াবাসহ আটক করে। দেলোয়ারকে আটক করা হয়। খবর পেয়ে বিজলীর নেতৃত্বে তার বাহিনীর সদস্যরা পুলিশকে ধাওয়া করে এবং ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। হামলা ঠেকাতে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় হানিফ ও দেলোয়ার হাতকড়া নিয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু বিজলীর লোকজন সেখানেই থেমে থাকেনি। পুলিশের অনুসরণে কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করে হামলা চালানো হয়। একই সঙ্গে তারা পাশের আরাকান সড়ক অবরোধ করে। ওই সময় ফাঁড়িতে ১৩ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন। তারা ফাঁকা গুলি ছুড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করতে থাকে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। গুলিতে আহত হন হানিফের বোন নাজমা আক্তার। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ১২টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার কোমরে গুলি লেগেছে বলে ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শরীফ রোকনুজ্জামান বলেন, মাদক ব্যবসার খবরে অভিযান চালানো হয়। ইয়াবাসহ হানিফ ও দেলোয়ারকে ৯ নম্বর রেল বিট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তৃতীয় লিঙ্গের লোকজন তাদের ফাঁড়িতে আনার পথ বন্ধ করে দেয়। সাত পুলিশ সদস্য আপ্রাণ চেষ্টা করছিল। কিন্তু তারা ফাঁড়ির প্রবেশপথে হামলা চালিয়ে আসামিদের ছিনিয়ে নেয়। কিছুক্ষণ পর একটি দল ফাঁড়িতে হামলা চালায়। তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপের পাশাপাশি গুলিও ছোড়ে। তিনি বলেন, পুলিশও আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নয় নম্বর রেল বিটের বস্তি নিয়ন্ত্রণ করে বিজলী রানীর পরিবার। তাদের বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থানার আন্দুয়া গ্রামে। যুগ যুগ ধরে তারা এখানে বসবাস করছে। দীর্ঘদিন ধরে তৃতীয় লিঙ্গের ভাই বিজলীকে সামনে রেখে মাদক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন মোহাম্মদ হানিফ ও তার পরিবার। তারা স্থানীয় বাজার এবং ভাসমান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা সংগ্রহ করে। কেউ টাকা দিতে না চাইলে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ওপর হামলা হয়। ফলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেউ তাদের ওপর হামলা চালাতে চায় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘এ এলাকার মানুষ বিজলীর পরিবারের কাছে জিম্মি। ৩০-৪০ জন হিজড়ার দল আছে। বিজলী তাদের সঙ্গে মাদক ও চাঁদাবাজি করে।’ তিনি দাবি করেন, বিজলী তৃতীয় লিঙ্গ নয়। তার পরিবারের মাদক ব্যবসাকে রক্ষা করার জন্য তিনি হিজড়ার পোশাক পরেছেন।
স্থানীয় মোহরা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী নুরুল আমিন বলেন, ‘তারা হিজড়া হওয়ায় সবাই তাদের থেকে দূরে থাকে। হানিফ ও তার পরিবারের মাদক ব্যবসার বিষয়টি পুলিশকে অনেকবার জানানো হয়েছে। মাঝে মাঝে অভিযান চলছে। যাদের গ্রেফতার করা হয়, তারা কিছুদিনের মধ্যে বেরিয়ে এসে একই কাজ করে।’
এদিকে আসামিদের বিরুদ্ধে ডাকাতি, সরকারি কাজে বাধা, গুলি করে মৃত্যু ও মাদক উদ্ধারের অভিযোগে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার রাতে কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শরীফ রোকনুজ্জামান বাদী হয়ে চান্দগাঁও থানায় দুটি মামলা করেন। একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৪ জন অজ্ঞাতনামা ও ২১০ জনকে। অপর একটি মাদক মামলায় হানিফ ও দেলোয়ারকে আসামি করা হয়। এ ঘটনায় তৃতীয় লিঙ্গের তিনজনসহ আটজনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে গ্রেফতারকৃত আসামীরা এখনো গ্রেফতার হয়নি।
চান্দগাঁও থানার ওসি মঈনুর রহমান জানান, ঘটনার পর থেকে অভিযান চলছে। ফাঁড়িতে হামলার ঘটনায় আটজনকে আটক করা হয়েছে। দুই পলাতককে শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে।