জাতীয়

সাগরে  ট্রলারডুবি: ভারতে আরও ১৭ বাংলাদেশি জেলেকে উদ্ধার

ভারতের সুন্দরবনে আবারও ১৭ বাংলাদেশি জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ভারতীয় কোস্টগার্ডের সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে। যাইহোক, তারা প্রায় ৪৮ ঘন্টা সাগরে ঢেউয়ের সাথে লড়াই করেছিল।

জানা যায়, এফবি ভাই ভাই ট্রলারটি ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের পাথরঘাটা থেকে গভীর সাগর পাড়ি দেয়। বাংলাদেশের বরগুনা জেলার ১৯ জেলে একটি ট্রলারে মাছ ধরতে রওনা হয়। তারা ১৬ তারিখে ভাল মাছ ধরেছিল, কিন্তু ১৭ তারিখে আবহাওয়া খারাপ হয়ে যায়। প্রবল জোয়ারে ট্রলারের নিচের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পানি ঢুকতে শুরু করে। বাংলাদেশি জেলেরা লাইফ জ্যাকেট ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে জীবন বাঁচাতে ভেলা তৈরি করে।

উত্তাল সাগরে ভেলায় ভেসে দুই দিন দুই রাত কাটান। মৎস্যজীবী মোহাম্মদ বসির বিশ্বাস জানান, এই দুই দিনে ১৯ জনের মধ্যে ভাগ করে ৭০০-৮০০ গ্রামের একটি কাঁচা লাউ খেয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যেই রুক্ষ সমুদ্রের ঢেউ তাদের দুই সঙ্গীকে টেনে নিয়ে যায়। বাকি ১৭টি শনিবার উপকূলে ভেসে যায়। তারা সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের কালীবাড়ি দ্বীপে আশ্রয় নেয়। সারারাত বাঘের ভয় থাকে। কোনোমতে বনের গাছে রাত কাটায়। প্রতিটা মুহূর্ত কাটে ভয়ে। অবশেষে রবিবার দুপুর ১২টার দিকে একটি ছোট ভারতীয় কাঁকড়া মাছ ধরার নৌকা দেখতে পান তারা। বাংলাদেশি জেলেরা তাদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানায়। পরে, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার মইপেথের কাঁকড়া মাছ ধরার নৌকায় ১৭ বাংলাদেশিকে মইপেথ কোস্টাল থানায় আনা হয়। সেখানে বেশ কয়েকজনের শারীরিক অসুস্থতা লক্ষ্য করেন পুলিশ অফিসার মধুসূদন পাল। রাত ১২টার দিকে তাদের জয়নগর কুলতলী গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

প্রশাসনের আধিকারিকরা ইতিমধ্যে সবার জন্য ত্রাণ শিবিরের ব্যবস্থা করেছেন। পর্যাপ্ত খাবার ও পোশাক সরবরাহ করা হয়। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, গভীর সমুদ্রে উদ্ধার অভিযান শুরুর পর গত ৩৬ ঘণ্টায় ভারতীয় নৌবাহিনী, উপকূলরক্ষী ও জেলেরা মোট ১০৪ বাংলাদেশি জেলেকে উদ্ধার করেছে। তাদের প্রত্যেককে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে রাখা হয়েছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনিচ্ছাকৃতভাবে সীমান্ত অতিক্রমের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে যত দ্রুত সম্ভব সবাইকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।

গত শুক্রবার হঠাৎ করে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে পড়ায় তীরে ফেরার সময় পাননি জেলেরা। এ সময় সাগরে ভারতীয় ও বাংলাদেশি জেলেদের বেশ কয়েকটি ট্রলার ডুবে যায়। এতে দুই দেশের প্রায় তিন শতাধিক জেলে নিখোঁজ হয়। এরপর ভারতীয় কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী ভারতীয়-বাংলাদেশি জেলেদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করে।

এদিকে, বিপর্যয়ের পর থেকে উপকূলরক্ষী বাহিনীর দুটি ডর্নিয়ার বিমান বিচ্ছিন্ন গভীর সমুদ্র এলাকায় আকাশে তল্লাশি চালাচ্ছে এবং বাহিনীর দুটি উদ্ধারকারী জাহাজ আইসিজিএস আনমোল এবং আইসিজিএস ভারত জলে নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে নিয়োজিত রয়েছে।

মন্তব্য করুন