জাতীয়

সিলেটে ত্রাণে সমন্বয়ের অভাব, উত্তরাঞ্চলে নজর নেই।বন্যা

সিলেট বিভাগের বন্যা কবলিত চার জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা অন্তত ৫০ লাখ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এ পর্যন্ত চারটি জেলার জন্য ৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা, ৩ হাজার ২০ টন চাল ও ৫৬ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ করেছে। ত্রাণের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ মানুষের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ ৬ দশমিক ৬২ পয়সা এবং চাল ৬০৪ গ্রাম।

তবে সরকারি এই বরাদ্দের বাইরেও সিলেট অঞ্চলের বন্যা দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এ ত্রাণ বিতরণে কোনো সমন্বয় নেই। অঞ্চলভেদে বানভাসিদের তালিকা এখনো তৈরি হয়নি। সে রকমই স্বস্তি চলে যাচ্ছে। কেউ একাধিকবার ত্রাণ পাচ্ছেন, আবার কেউ একবারও খাদ্য সহায়তার প্যাকেট পাননি।

স্থানীয়রা বলছেন, অনেকেই বানভাসি মানুষের জন্য ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে আসছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে সংগ্রহ করে বিতরণ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এখন জরুরি।

সুনামগঞ্জের বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, এখনো শত শত ঘরবাড়ি পানির নিচে। দুর্গত মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাসকারী অনেকের কাছে এখনো ত্রাণ পৌঁছায়নি। শহর ও বাজারের আশেপাশে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ দেওয়া হলেও দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন বেশি অসুবিধায় পড়ছেন। অনেক এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় এসব এলাকায় ত্রাণবাহী যান পৌঁছাতে পারছে না। বেশিরভাগ বেসরকারি, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রাস্তার পাশের এলাকায় দুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করছে।

ছাতকের আতাপুরের হাসনা বেগম বলেন, ‘আমার পরিবারের সবাই দুই দিন ধরে উপোস ছিলাম। পরে কারো কাছ থেকে চিড়া মুড়ি পেলাম। একটু একটু করে, খেয়ে জীবন বাঁচিয়েছি। কোনো স্বস্তি ছিল না।

একই উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের নওকাকান্দি গ্রামের রাজ্জাক বলেন, আমরা খাওয়া-দাওয়া কিছুই পাচ্ছি না। না খেয়ে মরতে হচ্ছে। একদিন আগে কেউ কিছু চিড়া-মুড়ি দিয়েছিলেন। এগুলো খেয়ে জীবন বাঁচিয়েছি। খাবার-দাবার পেলে আমি আমার সন্তানদের নিয়ে জীবন বাঁচাতে পারব।

কালারুকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘গ্রামের অনেক বিপন্ন মানুষ এখনো ত্রাণ পায়নি। তাদের ত্রাণ নিয়ে বাড়ি যাওয়া জরুরি। ‘

বিশ্বনাথের লামাকাজী এলাকার মির্জারগাঁওয়ের আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যারা ত্রাণ পাচ্ছেন তারাই পাচ্ছেন। ইউনিয়নের ভেতরের গ্রামগুলোতে কেউ ত্রাণ নিয়ে আসে না।

গতকাল দুপুরে উজিরপুর আশ্রয়কেন্দ্রের পানিতে অনেককে দাঁড়িয়ে ত্রাণ সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। এ সময় স্বস্তি দিচ্ছিলেন সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রমা বিজয় সরকার। তিনি বলেন, আমরা প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণ দেওয়ার চেষ্টা করছি। যাতে এই ধরনের বিপর্যয়ের সময় এটি তাদের জন্য দরকারী। ‘

ছাতক থানার এসআই মহিন উদ্দিন জানান, ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের জাওহরের খাড়া অংশে রাস্তা বন্ধ থাকায় শতাধিক ত্রাণবাহী যান চলাচল করতে পারছে না।

ত্রাণ বিতরণে সমন্বয় নেই : সিলেট ও ​​সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বেসরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ত্রাণবাহী গাড়ি দেখা গেছে। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বিশেষ করে প্রধান সড়কের পাশে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। তবে অনেক প্রত্যন্ত এলাকা এখনও দৃষ্টির বাইরে। ত্রাণ নিয়ে সেখানে কেউ যাচ্ছে না। অনেকে দূরদূরান্ত থেকে এসেও ত্রাণ না পেয়ে হতাশ। চাঁদপুরের দক্ষিণ মতলব থেকে স্বস্তি এনে দিয়েছে ‘ফ্রেন্ডস অ্যান্ড জোনস’ সোসাইটি। সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক শাকিল আহমেদ জানান, তিনি তিনটি পরিবারের জন্য খাবার নিয়ে এসেছেন। তারা দুই দিন ধরে ডেলিভারি করছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে নৌকা ও ট্রলারের ভাড়া তিন/চার গুণ বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন অনেক স্বেচ্ছাসেবক। তাই ইচ্ছা থাকলেও কিছু মানুষ ত্রাণ নিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছাতে পারছেন না।

মন্তব্য করুন