• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    সংসদে অভিযোগ, রাজনৈতিক ব্যবহারে পুলিশ বেপরোয়া

    রাজনৈতিক ব্যবহারের কারণে দেশের পুলিশ বাহিনী এখন দলীয় বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য তাদের অপকর্মে লিপ্ত হতে বাধ্য হচ্ছে। প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপিসহ বিরোধী দলের সদস্যরা পুলিশের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন।

    তারা চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট কমানোর প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদের বৈঠকে এসব অভিযোগ তোলেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভায় সভাপতিত্ব করেন। সম্পূরক বাজেটে জননিরাপত্তা বিভাগের কাছে অতিরিক্ত ১৭৮ কোটি ১৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দাবি করা হয়। এই বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব করেন ১০ এমপি।

    স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের অনুপস্থিতিতে বিরোধীদলীয় নেতাদের অভিযোগের জবাব দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। “পুলিশের কিছু ভুল নেই ।কিন্তু যারা অন্যায় করছে তাদের সরকার প্রশ্রয় দিচ্ছে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। যারা অন্যায় করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

    গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, কনস্টেবল থেকে শুরু করে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়েছে। এর কারণ পুলিশ যারা অপরাধ করছে তাদের শাস্তি হচ্ছে না। এ কারণে পুরো পুলিশ বাহিনীকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।

    বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, এই সরকারের আমলে পুলিশ আর রাষ্ট্রীয় বাহিনী নয়; দলীয় শক্তিতে পরিণত হয়েছে। নতুন সমস্যার ভয়ে মানুষ বড় বিপদে পড়লেও এখন আর পুলিশের কাছে যেতে রাজি নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম করেছে। হেফাজতে নির্যাতন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রতিকার চাইতে গেলেও অত্যাচার নেমে আসে।

    জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, পুলিশের সঙ্গে কেউ অন্যায় করলে মানবাধিকার কমিশন আজ নীরব। কোনো পুলিশ অন্যায় করলে সব পুলিশ একত্রিত হয়ে তাকে সমর্থন করে। এতে বিচার বিভাগ অসহায় হয়ে পড়ে। মানুষের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে; কিন্তু তাদের যাওয়ার জায়গা নেই। পুলিশকে বুঝতে হবে, ‘পি’-ভদ্রতার জন্য। পুলিশের ধারণা অস্ত্র তার হাতে; এর কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। তাদের রয়েছে সীমাহীন ক্ষমতা। তিনি সংসদে মানবাধিকার বিষয়ে একটি সর্বদলীয় বিশেষ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, মানবাধিকার কমিটি জনগণের যেকোনো অভিযোগ তদন্ত করে জবাবদিহি করবে।

    বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলায় পুলিশ বাদী ও সাক্ষী। এটা প্রমাণ করে দেশের বিচার ব্যবস্থা কতটা নাজুক। সরকারি দল চায় পুলিশ তাদের নির্দেশ পালন করুক। এই ধারা থেকে বের হতে না পারলে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে পারব না।

    তিনি বলেন, র‌্যাব মহাপরিচালকের সফর উপলক্ষে তার নিজ জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের সব সড়ক নিরাপত্তার নামে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গেটে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কোনো ছাত্রকে যেতে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ বাহিনীকে ক্ষমতায় থাকার লাইসেন্স দেয়া হয়েছে।

    হারুনুর রশীদ বলেন, নির্বাচন কমিশন নামের প্রতিষ্ঠানটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নির্বাচন কমিশনের কী দরকার, পাগল! পুলিশের আইজিপিকে ইসির প্রধান করেছেন তিনি। তাদের অধীনে নির্বাচন দিয়েছেন।

    সরকার আইনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়,” সাবেক আইজিপি শহীদুল হককে উল্লেখ করে বিএনপির আরেক সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন। সাবেক সিইসি কে এম নুরুল হুদাকে যেমন দেখেছি, তিনি নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। এই ফ্রুটিকা আগে খেয়ে থাকলে হয়তো ভালো বলতে পারতেন। ‘

    “আমরা বারবার আদালতে গিয়েছি; কিন্তু খালেদা জিয়া মুক্তি পাননি। সরকারের এক নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, আদালতে কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। তাই আমি বলব, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। ভারতে কেন মহানবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী মুসলমানদের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করার দাবি জানান বিএনপির এই সংসদ সদস্য।

    জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছু ভালো কাজ করছে। সে কিছু খারাপ কাজও করছে। এই খারাপ জিনিস সংশোধন করা প্রয়োজন।

    জবাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, পুলিশ বাহিনী নিয়ে বক্তব্য রাজনৈতিক। পুলিশের কাজ দুষ্টকে দমন করা, শালীনতা বজায় রাখা। বর্তমান সরকারের অধীনে পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছে। অনিয়মের কারণে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা চাকরি হারাচ্ছেন। অনেকে বাড়াবাড়ির জন্য বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন।

    মন্তব্য করুন