• বাংলা
  • English
  • আবহাওয়া

    ঘূর্ণিঝড় হয়ে আসছে ‘আসানি’

    রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় তাপপ্রবাহ বইছে। প্রচণ্ড গরমে শ্বাসরুদ্ধকর জনজীবন। এ অবস্থায় শনিবার বিকেলে অনেক জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে। স্থলভাগে এ অবস্থা চলতে থাকা বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা আরও বেড়েছে। মার্কিন নৌবাহিনী পরিচালিত যৌথ টাইফুন সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় আসানিতে পরিণত হয়েছে।

    তবে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর এখনো ঘূর্ণিঝড়ের কারণ সম্পর্কে কোনো তথ্য দেয়নি। গত সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদফতরের জারি করা একটি বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, নিম্নচাপটি উত্তর-পশ্চিম দিকে আরও ঘনীভূত হওয়ায় দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে এক নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করতে বলা হয়েছে। ভারতীয় আবহাওয়া দফতর বলছে, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি এখনও আলপ্রবাদ প্রদেশ ও ওড়িশার দিকে ধেয়ে আসছে। তবে, ১০ মে এর পরে, ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পূর্ব দিকে ওড়িশা উপকূলের দিকে মোড় নিতে পারে।

    কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ে বাংলাদেশি পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ মার্কিন নৌবাহিনী পরিচালিত যৌথ টাইফুন সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে বলেন, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রথম দুই ধাপে পরিণত হয়েছে। . শনিবার দুপুর ১২টায় ঘূর্ণিঝড়টি ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১ দশমিক ৩ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় প্রায় ১৫ কিলোমিটার বেগে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। দুপুর ১২টায় ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটার। দমকা হাওয়ার সাথে যা ঘণ্টায় প্রায় ৯৩ কিলোমিটার বেগে উঠছে। ঘূর্ণিঝড়টি কলকাতা বন্দর থেকে প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার দূরে ছিল।

    ঘূর্ণিঝড়টি ভূমিতে আঘাত হানবে কি না তা সোমবারের আগে বলা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। তবে ঘূর্ণিঝড়টি ৯ মে থেকে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

    ১০ মে থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে বৃষ্টি শুরু হতে পারে। ১১ মে বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেট বিভাগের জেলায় এবং ১২ ও ১৩ মে সারাদেশে বৃষ্টি হতে পারে। ১৩ এবং ১৪ মে চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আমেরিকান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুসারে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ১০ থেকে ১৪ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় ৪০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে।

    বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর কেন এখনো ঘূর্ণিঝড়ের তথ্য দিতে পারেনি জানতে চাইলে এই গবেষক বলেন, “বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মডেলের দৈনিক আবহাওয়ার পূর্বাভাসের তথ্য অনুসরণ করে এবং বিশ্লেষণ করে কিনা তা আমার জানা নেই।”

    তারা ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের উপর অনেক বেশি নির্ভর করে।

    বন্দরে সতর্ক সংকেত ১: দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর ও নিকটবর্তী দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে, বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৪০ কিলোমিটার, দমকা বা দমকা বাতাসের আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

    আবহাওয়াবিদ ড. শাহিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিম্নচাপ কেন্দ্রের আশপাশে সাগর উত্তাল রয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে সাবধানে উপকূলের কাছাকাছি আসতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। একই সঙ্গে তাদের গভীর সমুদ্রে বিচরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

    শনিবার দুপুর ১২টায় ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার থেকে ১৩৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মংলা বন্দর থেকে ১৪৬০ কিলোমিটার দূরে ছিল বলে জানা গেছে।

    বাংলাদেশ বাঁচতে পারে: ভারতের আবহাওয়া বিভাগ বলছে, আপাত হালকা চাপ এখন উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে যাচ্ছে। এটি যদি দিক পরিবর্তন না করে এই দিকে চলতে থাকে তবে এটি ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়ে ভারতের উত্তর আলপাকা অঞ্চল এবং ওড়িশার উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তবে ভূমিকম্পের কেন্দ্রটি মাটির নিচে বলে জানা গেছে; কোনো সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়নি।

    বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সানাউল হক মাল বলেন, সুস্পষ্ট লঘুচাপটি বর্তমানে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের ওড়িশায় আঘাত হানার সম্ভাবনা থাকলেও বাংলাদেশের সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় এলাকায় এর কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।

    রোহিঙ্গা শিবিরে সতর্কতা : টেকনাফ (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে লাখ লাখ রোহিঙ্গা ‘আতঙ্কিত’। তবে এ দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশাসন কন্ট্রোল রুমসহ সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় প্রতিটি শিবিরে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপনের নির্দেশনা সহ ৯টি কার্যক্রম উল্লেখ করে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মিকন তানচাঙ্গা স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের স্থানান্তর করা উচিত।

    মন্তব্য করুন