১৪ দল জোটগতভাবে আগামী নির্বাচনে যাচ্ছে
নানা উত্তেজনা সত্ত্বেও আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪টি দল জোটগতভাবে অংশ নেবে। এ জন্য তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব দূর করে জোটের কার্যক্রম জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবেলায় শিগগিরই রাজনৈতিক তৎপরতা নিয়ে মাঠে নামবে ক্ষমতাসীন জোট।
মঙ্গলবার গণভবনে ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও বলেছেন, আগামী নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোট যৌথভাবে অংশ নেবে। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন একসঙ্গে করব। এজন্য ১৪টি দলকে সক্রিয় রাখতে হবে। দেশ থেকে সাম্প্রদায়িক শক্তি এখনো পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। তাই ১৪ দলকে একসঙ্গে থাকতে হবে, একসঙ্গে থাকতে হবে, পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাজনৈতিক কর্মসূচি বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি ১৪ দলকে বিএনপি-জামায়াতের অপপ্রচার ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিএনপিতে নেতৃত্বের সংকট রয়েছে। ক্ষমতায় তাদের নেতা কে হবে? কে হবেন প্রধানমন্ত্রী? এ কারণে তারা নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে জনগণকে তাদের অপকর্ম সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ‘বেঁচে থাকার’ স্বার্থে ১৪ দলকে আরও কার্যকর ও শক্তিশালী করতে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নির্মূল করে একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান জোটের শরিক দলগুলোর নেতারা। একই সঙ্গে তারা ভোজ্য ও জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি জনজীবনে নানা সংকট এবং নির্বাচনী ব্যবস্থায় ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। হেফাজতের দাঙ্গা এবং দুর্গাপূজায় সাম্প্রদায়িক হামলা সহ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সাম্প্রতিক বৃদ্ধি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন, তারা তাদের দমনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন নেতা বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় ত্রুটির বিষয়টি তুলে ধরে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জোটের মধ্যে ‘অবমূল্যায়ন’ নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে সঠিক মূল্যায়নের দাবিও জানান তারা।
দীর্ঘ তিন বছরেরও বেশি সময় পর জোটের শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলের নেতাদের এই বৈঠক হয়। এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের কয়েকদিন আগে শরিকদের সঙ্গে বসেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। ওই নির্বাচনের মাধ্যমে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এলেও আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান পায়নি মহাজোট ও ১৪ দলীয় জোট। এমনকি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী নেতারা ১৪ দলীয় জোটকে ‘নিজের দুই পায়ে দাঁড়ানোর’ বা ‘বিরোধী দল থেকে’ নিজ নিজ দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আগামী নির্বাচনে নিজ নিজ প্রতীকে অংশগ্রহণের ইঙ্গিতও দেন প্রধানমন্ত্রী। টানা তিন মেয়াদে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জোটবদ্ধভাবে হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় ছিল।
সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বা আহ্বায়ক-যুগ্ম আহ্বায়ক প্রত্যেকে ১৪ দলের শরিকরা অংশ নেন। দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলীয় আওয়ামী লীগের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু ছাড়াও আরও তিন নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রতিটি দলের শীর্ষ নেতাদের একজনের বক্তব্য শোনেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শরিক নেতাদের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার তাৎক্ষণিক জবাবও দেন তিনি।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, জিনিসপত্রের দামের দিকে কঠোর নজর দেওয়া প্রয়োজন। সাম্প্রদায়িক শক্তির দাম্ভিকতা দমনও জরুরি। ‘আমাদের নেতারাও’ সাম্প্রদায়িক ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে। অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি নিয়ে মানুষের মনে ভুল বার্তা চলছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক নির্বাচনে প্রশাসনের নগ্ন হস্তক্ষেপ দেখা গেছে। আমলাতন্ত্রের শিকার হওয়া উচিত নয়। নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতি বুঝতে সমস্যা হচ্ছে সাধারণ মানুষের। এটি কিছু জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। মেনন সকল দলকে জোটের ঐক্যকে “সম্মান” করার এবং শক্তিশালী করার দিকে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির দাম স্থিতিশীল রাখতে হবে। অন্যদিকে যারা জঙ্গিবাদ চালাচ্ছে তাদের কোনো ছাড় পাওয়া উচিত নয়। দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের সব কর্মকাণ্ডে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালুর দাবি জানান তিনি।