জাহাজে হামলার পর ফের আলোচনায়।কারা চালাচ্ছে শিপিং করপোরেশন
স্বাধীনতার ৫০ বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে ৪৮ গুণেরও বেশি। এর পাশাপাশি বাড়ছে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যাও। এখন ৭২টি জাহাজ সাগরে ভাসছে। আর বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) বহরে এখনোও আটে বন্দী । সময়ের শিপিংয়ে হাওয়া বইলেও সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেনি বিএসসি।
২০২০-২১ অর্থবছরে বেসরকারি জাহাজ মালিকরা সমুদ্র বাণিজ্য থেকে আয় করেছে ২ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে একই সময়ে বিএসসি আয় করেছে মাত্র ২৭৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিএসসির পিছিয়ে পড়ার পেছনে রয়েছে আমলাতান্ত্রিক প্রশাসন। এখানকার পরিচালনা পর্ষদে সমুদ্র বাণিজ্যে দক্ষ জনবল নেই। ফলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দূরদর্শিতা দেখাতে পারেনি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটি। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে ‘সমৃদ্ধি অব এমভি বাংলা’ জাহাজ পাঠানোর ক্ষেত্রে বিএসসি তাদের বিচক্ষণতার প্রমাণ দিতে পারেনি। আলভিয়া বন্দরের নাবিকরা তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য ছয় দিন ধরে তাগাদা দিয়ে আসছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এক দশকেও ছয়টি নতুন জাহাজের স্বপ্ন পূরণ হয়নি : বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) এক দশক আগে তাদের বহরে ছয়টি নতুন জাহাজ যুক্ত করার পরিকল্পনা করেছিল। তারা দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার, দুটি মাদার ট্যাঙ্কার এবং দুটি মাদার প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাঙ্কার কেনার পরিকল্পনা করেছিল। তারা রামপাল, পায়রা এবং মাতারবাড়িতে তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের আশেপাশে দুটি ৮০,০০০ টন মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার কেনার পরিকল্পনা করেছে। এখনো দিনের আলোর মুখ দেখেনি। শোধনাগারের অপরিশোধিত তেল পরিশোধন ক্ষমতা ভবিষ্যতে দ্বিগুণ হবে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে তারা তাদের নিজস্ব জাহাজে পরিবহনের জন্য এক থেকে দেড় লাখ টন ধারণক্ষমতার দুটি নতুন মাদার ট্যাঙ্কার কেনার পরিকল্পনাও করেছিল অনেক আগেই। কিন্তু আলোর মুখ দেখেননি। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে আমদানি করা ডিজেল এবং জেট ফুয়েল পরিবহনের জন্য ৮০,০০০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি মাদার প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাঙ্কার চালু করার পরিকল্পনা করছে। তবে এটিও বহরে যুক্ত হয়নি।
আমলাতন্ত্র ভিত্তিক পরিচালনা পর্ষদ: বিএসসির পরিচালনা পর্ষদে ১০ জন সদস্য রয়েছে। ১৯৭২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জারি করা রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ১০ (সর্বশেষ সংশোধিত) অনুসারে, নৌপরিবহন মন্ত্রী বোর্ডের চেয়ারম্যান। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুইজন যুগ্ম সচিবের সমন্বয়ে বিএসসির পরিচালনা পর্ষদ মোট ১০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত। পরিচালনা পর্ষদ সম্পূর্ণ আমলাতান্ত্রিক হওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত এই প্রতিষ্ঠানে কাঙ্খিত গতি নেই। অফিসের শীর্ষ পদে যারা আছেন তারা সবাই রাষ্ট্রের আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ফলে বিএসসিতে তারা সেভাবে সময় দিতে পারে না।
নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের চেয়ারম্যান খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এর আগে তিনি বলেছিলেন, ইউক্রেনের ক্ষেত্রে বিএসসির পক্ষ থেকে আন্তরিকতার কোনো কমতি নেই। নাবিকরা দ্রুততম সময়ে জাহাজ থেকে নামতে সক্ষম হয়।