রাস্তা হয়ে গেল কাউন্সিলরের পল্ট
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের কামাল সরণির (৬০ ফুট সড়ক) পশ্চিম আগারগাঁও পয়েন্ট থেকে পূর্ব দিকে একটি রাস্তা চলে গেছে। রাস্তাটি স্থানীয়দের কাছে পশ্চিম আগারগাঁওয়ে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সড়ক নামে পরিচিত। কিন্তু সেখানে প্রায় ৭০০ বর্গফুট রাস্তা বন্ধ করে প্লট করা হয়েছে। ভবন নির্মাণের জন্য প্লটটি টিন দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে। ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য একটি ডেভেলপার কোম্পানির সাইনবোর্ডও টাঙানো হয়েছে। এখন চলছে বাণিজ্যিক ও বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণের প্রস্তুতি। আর এটি করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) স্থানীয় কাউন্সিলর (২৮ নং ওয়ার্ড) ফোরকান হোসেন ও তার ভাই মো: আসাদুজ্জামান আসাদ।
রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তারা বলেন, জামে মসজিদ সড়কটি কামাল সরণির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল। মসজিদ রোড থেকে আরেকটি সড়ক পশ্চিমে বাঁক দিয়ে কামাল সরণির সঙ্গে যুক্ত ছিল। টার্নিং পয়েন্ট থেকে কামাল সরণি পর্যন্ত পুরো রাস্তা দখল করে রেখেছে কাউন্সিলর গ্যাং। দখলকৃত রাস্তার পাশেই ছিল স্থানীয় কাউন্সিলরের আধাকাঠা জায়গা। ওই জায়গায় রাস্তার জায়গা যোগ করে বড় প্লট করা হয়েছে। ফলে কামাল সরণি-জামে মসজিদ সড়কের ওই অংশের কোনো অস্তিত্ব নেই। কামালল সরণিতে ঘুরার রাস্তা ধরে স্থানীয়রা যাতায়াত করে। দুই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতেন। একটি সড়ক যেমন উধাও, তেমনি অন্যদিকে যানজট লেগেই থাকে।
এলাকাবাসীর মতে, এখন কামাল সরণিতে যাতায়াতের জন্য যে রাস্তাটি ব্যবহার করা হয় সেটি নকশা অনুযায়ী ২০ ফুট চওড়া হওয়া উচিত। ওই রাস্তার ১০ ফুট অংশ দখল করে প্লট বড় করা হয়েছে। ফলে চলমান সড়কের প্রস্থ ১০ ফুটে নেমে এসেছে। ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম যখন দখলকৃত খাল ও রাস্তা উদ্ধারে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে তার এক কাউন্সিলরের এমন ঘটনা নিয়ে এলাকায় চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।
জানা গেছে, কামাল সরণি নির্মাণের সময় কাউন্সিলরের কিছু জমি সরকার অধিগ্রহণ করে। আর একটি জিরো পয়েন্ট ৬৮ কাঠা বাকি। ওই সামান্য জমিতে কাউন্সিলর কিছু করতে পারেননি। জায়গার পরিধি বাড়াতে চোখ যায় দুই পাশের রাস্তার দিকে। সম্প্রতি সড়কের সর্বত্র টিনের বেড়া দেয়া হয়েছে। কাউন্সিলর প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি।
নতুন প্লটের পাশের প্লটের মালিক একেএম আজম খান বলেন, “আমার প্লটের দুই পাশে রাস্তা ছিল। কাউন্সিলর রাস্তা দখল করে নেওয়ায় আমার প্লটের একপাশে রাস্তা আছে। বিষয়টি কাউন্সিলরকে জানানোর পর তিনি ও তার ভাই আসাদুজ্জামান একদিন আমার অফিসে আসেন। ওই প্লটটি তৈরি করতে তারা অনেক বিনিয়োগ করেছেন বলে জানান।
তিনি আমাকে এক কোটি টাকায় প্লট দেওয়ার প্রস্তাব দেন। আমি রাজি হইনি।
কাউন্সিলর ফোরকান হোসেন বলেন, প্লট নিয়ে আজম ভাইসহ এলাকার অনেকের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। কিন্তু এখন আমার ছোট ভাই আসাদ দেখছে। প্রয়োজনে এলাকার লোকজন আসাদ ও আজম ভাইয়ের সঙ্গে বসে দুপক্ষের কথা শুনুন। তবে রাস্তার জায়গা দখল নিয়ে এলাকার লোকজন যে গুজব ছড়াচ্ছেন তা সঠিক নয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, কামাল সরণির কাঁচা মরিচ রেস্তোরাঁর পাশের কয়েক কাঠা জমি টিন দিয়ে ঘেরা। সামনে একটি সাইনবোর্ড লেখা, ‘এখানে ইট-বালি বিক্রি হয়’। ভেতরে ইটের স্তূপ দেখা যায়। সঙ্গে দুটি সাইনবোর্ড সাঁটা। একজন লিখেছেন, ‘ক্রয় সূত্রে এই জমির মালিক ড. আসাদুজ্জামান (আসাদ) মোবাইল নম্বর ০১৯…৫৬১’। আরেকটি সাইনবোর্ডে লেখা, ‘লায়ন বিল্ডার্স লিমিটেড, বাণিজ্যিক ও আবাসিক স্থানের বুকিং চলছে’। এখানে ‘আপনার এখানে একটি স্বপ্ন আছে’ শব্দ সহ কয়েকটি ফোন নম্বর রয়েছে।
কাউন্সিলর ফোরকান হোসেনের ভাই আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, সেখানে তার ২ দশমিক ৮৪ শতাংশ জমি রয়েছে। আমার কাছে সব -খারিজ নথি আছে। আমার জমির পূর্ব দিকে একটা রাস্তা ছিল। দক্ষিণ দিকে চলমান রাস্তা আগে ছিল না। আজম খানই একবার পূর্ব দিকের রাস্তা দখল করেছিলেন। এখন সেই রাস্তায় আমার কিছু জায়গা আছে। আজম ভাইয়ের প্লটও আছে। এ বিষয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা হয়। এক সময় আজম ভাই আমার জমি কিনতে চেয়েছিলেন। পরে আর নেননি। এখন দক্ষিণ পাশের রাস্তা খোলা থাকায় আগের রাস্তা আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেছে।