• বাংলা
  • English
  • শিক্ষা

    চালকের খামখেয়ালিরকারণেই এমন মৃত্যু!

    আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত * চালক  সহ গ্রেফতার ২ * প্রক্টর অব্যাহতি

    রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে মঙ্গলবার রাতে ট্রাকচালকের চাপায় প্রাণ হারিয়েছেন গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাহবুব হাবিব হিমেল। চালক কোথাও না তাকিয়ে তড়িঘড়ি করে মোটরসাইকেলের উপর ট্রাকটি তুলে নেয়। দুর্ঘটনায় আহত রায়হান নামের এক শিক্ষার্থী ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এ অভিযোগ করেন।

    এদিকে হিমেলের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত ট্রাক চালক ও তার সহযোগীকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১০টি দাবিতে প্রশাসনের ইতিবাচক মনোভাব থাকায় আপাতত আন্দোলন স্থগিত করেছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর লিয়াকত আলীকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন প্রক্টর নিয়োগ করা হয়েছে।

    এদিকে সহপাঠীসহ ক্যাম্পাসের সবাই বুধবার চোখে জল নিয়ে হিমেলকে বিদায় জানান। দুই দফা জানাজা শেষে নাটোরের নানাবাড়িতে হিমেলের মরদেহ দাফন করা হয়।

    আহত ছাত্র রায়হান প্রামাণিক রিমেল মঙ্গলবার রাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘হিমেল মোটরসাইকেল চালাচ্ছিল। ট্রাক দেখে রাস্তার একপাশ দিয়েযাচ্ছিলেন। কিন্তু চালক কোথাও না তাকিয়ে তড়িঘড়ি করে গাড়িটি তাদের দিকে তুলে দেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ট্রাকটি উপরে উঠে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই হিমেলের মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, ‘আমি সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুদের ফোন করি। কিন্তু হিমেলের মাথার দিকে তাকিয়ে আর কিছু মনে করতে পারলাম না। হয়তো জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি। কারণ হিমেলের মাথা গলে গেছে। ‘

    চালক-হেলপার গ্রেফতার: হিমেলের মৃত্যুর ঘটনায় বুধবার দুপুরে ট্রাকচালক টিটু ও তার সহযোগী হামিম হোসেন কালুকে আটক করেছে পুলিশ। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে হত্যা মামলার আবেদনও করা হয়েছে। অভিযোগের ধারা অনুযায়ী বিষয়টি রেকর্ড করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আরবিআইয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, আমরা এ ঘটনাকে হত্যা উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছি।

    পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ: হিমেলের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। লাশ দাফনের আগে নাটোরে তার মায়ের কাছে চেক হস্তান্তর করেন উপাচার্য। উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, “হিমেলের পরিবারকে ধাপে ধাপে আরও সহযোগিতা করা হবে।

    হিমেলের মায়ের আজীবন চিকিৎসার খরচ বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে। এছাড়া আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার যাবতীয় খরচও বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে।

    ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর লিয়াকতকে মুক্তি: দুর্ঘটনার পর প্রক্টরকে বারবার কল করেও তার সহায়তা না পেয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর লিয়াকত আলীকে মুক্তি দেওয়া হয়। বুধবার রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত এক আদেশে গণিতের অধ্যাপক আশাবুল হককে নতুন প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

    সব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস, আন্দোলন স্থগিত : হিমেলের মৃত্যুকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলনে ১০টি দাবি তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন তাদের সব দাবি মানার আশ্বাস দেওয়ায় আপাতত আন্দোলন থেকে সরে এসেছেন তারা। বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাবাশ বাংলাদেশ’ মাঠে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় বসেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাকারিয়া, অধ্যাপক সুলতান উল ইসলামসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

    আলোচনা সভায় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রথম দাবি ছিল হিমেলের পরিবারকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। কারণ এর জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আমরা তার পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছি।  তার মাকে  মাসিক বড় একটি নগদ অর্থ  দেওয়ার কথা ভাবছে। তবে আমরা শিক্ষার্থীদের সব দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। হিমেলের নামে রাস্তা ও ভবন হবে।

    বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হিমেলের মরদেহ চারুকলা অনুষদে আনা হয়। সেখানে তার সহপাঠীদের কান্নায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। তার এক বান্ধবী জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ও অনুষদবৃন্দ। পরে তার মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে আনা হয়। সেখানে প্রথম জানাজা শেষে বেলা ১১টার দিকে মরদেহ নিয়ে নাটোরের উদ্দেশে রওনা হন তারা।

    নাটোরের নানাবাড়িতে দাফন: এদিকে নাটোর প্রতিনিধি জানান, বুধবার বিকেলে নাটোর শহরের কাপুরিয়াপট্টি এলাকায় হিমেলের মরদেহ তার নানাবাড়িতে পৌঁছালে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। হিমেলের অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না স্বজন ও এলাকাবাসী।

    এদিকে, আরবিআইয়ের উপাচার্যসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা কনভয় নিয়ে নাটোরে হিমেলের নানার বাড়িতে আসেন। সেখানে তারা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানান।

    পরে দুপুর ২টায় গারিখানা কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

    মন্তব্য করুন