শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়।হঠাৎ হার্ডলাইনে সরকার
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাস্ট) চলমান আন্দোলন নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি মোবাইল ব্যাংকিং এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর্থিক সহায়তার অভিযোগে সোমবার রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে কয়েকজন সাবেক শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে সিলেট থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
এদিকে নানা চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত অনশন ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। এছাড়া উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। তবে আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ অনশন চালিয়ে যেতে চান। তাদের মধ্যে আলোচনা চলছে।
মঙ্গলবার রাতে আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসে চক্কর দিয়ে শপথ করে বলেন, স্বৈরাচারী ফরিদ উদ্দিন পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের লড়াই চালিয়ে যাব। এত দিন অনশনে থাকা ভাই-বোনদের নির্ভীক সংগ্রামের অনুপ্রেরণা বহন করে আমরা দ্বিগুণ শক্তি ও প্রাণশক্তি নিয়ে আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাব। আমরা তাদের দুর্দশা বৃথা যেতে দেব না. আমরা এই আন্দোলনের মাঠ ছাড়ব না। আমরা আমাদের এক দফা দাবি পূরণ করব তবে ঘরে ফিরব। ‘
সাধারণ শিক্ষার্থীদের শপথবাক্য পাঠ করান আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার রাজ। এরপর উপাচার্য ভবনের সামনে সবাই একত্রিত হয়ে অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। তবে অনশনে থাকা কয়েকজন প্রথমে রাজি হননি।
গতকাল সকালে ঢাকা থেকে কয়েকজনকে আটকের খবর ক্যাম্পাসে পৌঁছালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অন্যতম মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার বলেন, আমরাও এমন অভিযোগ শুনেছি। আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের সব লেনদেন অ্যাকাউন্ট আগে বন্ধ করা হয়েছে. তবে এসব দিয়ে আমাদের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।
আন্দোলনে টাকা আসছে: সিলেটে শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রাক্তন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ব্যক্তি এক অ্যাকাউন্টে ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৬১৭ টাকা পাঠিয়েছেন। ‘ফান্ড ফর সাস্ট’ নামের এই তহবিলে তোলা অর্থ আন্দোলনের বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হয়।
জানা গেছে, ‘ফান্ড ফর সাস্ট’ নামে এই তহবিলে মোট ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৬১৮ টাকার মধ্যে খরচ হয়েছে ৪ লাখ টাকার বেশি। ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তহবিলে টাকা আসছে। ফান্ড ফর সাস্ট নামের একটি অনলাইন গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, খন্দকার শিহাব উদ্দিনের ইস্টার্ন ব্যাংকের চৌহাট্টা শাখায় একটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দেশ-বিদেশ থেকে টাকা আসছে। শিহাবের অ্যাকাউন্ট নম্বর ব্যবহার করা হচ্ছে টাকা তুলতে।
এছাড়া আরিফ, শিহাব, জুনায়েদ, জুবায়ের ও নাদের চৌধুরীর মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে টাকা আদায় করা হচ্ছে। শাবির অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র মীর রানা, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আদনান রহমান, মাজহারুল হক পিটুল (অর্থনীতি), সৌরভ সানলাপ চাকমা (সমুদ্রবিদ্যা), জোবায়ের আহমেদ (অর্থনীতি), শুভময় শুভ (অর্থনীতি), নাদের চৌধুরী (অর্থনীতি)। তহবিল সংগ্রহের দায়িত্বে রয়েছে। , খন্দকার শিহাব উদ্দিন শিহাব (অর্থনীতি) ও রিশাত প্রতীক (অর্থনীতি)।
শাবি সূত্রে জানা গেছে, খন্দকার শিহাব উদ্দিন শিহাব ‘ফান্ড ফর সাস্ট’-এর হিসাব দেখভাল করছেন। খরচের দায়িত্বে আছেন মীর রানা। সোমবার বিকেল পর্যন্ত চার লাখ ৮ হাজার ৪৯০ টাকা খরচ করে সংগৃহীত তহবিল থেকে গেছে দুই লাখ ৪৭ হাজার ৪৪৬ টাকা।
ব্যয়ের একটি বড় অংশ চিকিৎসা ও খাবার খাতে ব্যয় হয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে খরচের দায়িত্বে থাকা শিক্ষার্থী মীর রানা গণমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করেছেন। রিহা নামে দুটি প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া ৬০ হাজার টাকা। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের খরচ হয়েছে ১৯,০৬০ টাকা।
শাবির আন্দোলনের ছাত্রী মেহনাজ মৌমিতা বলেন, শুধু শাবির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা ফান্ডে টাকা পাঠাচ্ছেন। বাইরের কোনো সংস্থা আমাদের টাকা পাঠায়নি। তহবিলের টাকা চিকিৎসা ও রান্নাবান্নায় ব্যয় হচ্ছে। যেহেতু আমরা শাবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি, তাই সরকারের সুবিধা নেওয়া অনেক ক্ষেত্রেই যৌক্তিক মনে হয়নি।
এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের কাছে টাকা পাঠিয়ে সহযোগিতার অভিযোগে শাবিরের পাঁচ সাবেক ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার রাতে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের আটক করা হয়। মঙ্গলবার ঢাকা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।