উস্কানিদাতা মন্ত্রী-এমপিরা মনোনয়ন পাবেন না
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থীদের উসকানি দেওয়া মন্ত্রী-এমপিদের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের সময় এ সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্টভাবে দলের সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের উসকানি দেওয়া মন্ত্রী-এমপিদের তালিকা তৈরি করতে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। দলটির সভাপতিমণ্ডলীর কয়েকজন সদস্য রোববার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন ১০ জানুয়ারি থেকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের উসকানি দেওয়া নেতাদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হবে। আটজন সাংগঠনিক সম্পাদক এই তালিকা তৈরি করবেন। শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের মুলতুবি বৈঠকে ইউপি নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিভিন্নভাবে উসকানিতে নেতাদের নেতিবাচক ভূমিকার প্রসঙ্গ উঠে আসে। বৈঠকে অংশ নেওয়া পাঁচ নীতিনির্ধারণী নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্রোহী প্রার্থীদের উসকানি দেওয়া নেতাদের বিষয়ে দলের সিদ্ধান্তের কথা তাদের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের উসকানি দেওয়া এমপিদের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উসকানি দেওয়া এমপিদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে দলের আট সাংগঠনিক সম্পাদকের সহায়তা নেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি। এ সময় সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবাসন দিবসের পর থেকে উস্কানিমূলক নেতাদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হবে। আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা বলেছেন, দল থেকে ব্যাপকভাবে বহিষ্কার হলেও অনেক বিদ্রোহী প্রার্থীকে কোনোভাবেই সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। এতে অনেক জায়গায় বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো ইউনিয়নে প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল বা জটিলতা থাকলেও তৃণমূলের মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ চমকপ্রদ। তাছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে অনেক নেতা দলীয় মনোনয়নের বিরোধিতা করেছেন। ফলে বিদ্রোহী প্রার্থীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন দলীয় প্রার্থীরা। এসবের পেছনে রয়েছে কিছু সংসদ সদস্যের উস্কানি। দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে ইউপি নির্বাচনে শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা খোলা ছিল বলে জানিয়েছেন অভিযুক্ত কয়েকজন এমপি। এরপর বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য তাদের নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থিতা খোলা রাখার অনুরোধও করেন। কিন্তু কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। আবার নিজের পছন্দের নেতাদের দলের মনোনয়ন না দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন অনেক এমপি। এক পর্যায়ে তারা বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দিতে বাধ্য হয়। তবে ইউপি নির্বাচনে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ ভোট পেয়েছে তাতে বেশ সন্তুষ্ট আওয়ামী লীগ। এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে বেড়েছে। এখন পর্যন্ত শুধু আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ীদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ সমর্থক। তবে দলের প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সমর্থন না পেলে বিদ্রোহী প্রার্থীরা আরও ইতিবাচক ফল পেত। এর আগে গত ১৯ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ফাঁস করার বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এরপর ফল বিপর্যয়ের জন্য পরোক্ষভাবে উন্মোচিত সাংসদের দিকে আঙুল তোলা হয়। বৈঠকে বলা হয়, সংসদ সদস্যসহ বেশ কয়েকটি জেলার শীর্ষ নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের ফাঁস করেছেন। মন্ত্রিসভার একজন সদস্যের (যিনি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যও) বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মন্ত্রী ময়মনসিংহ বিভাগের সংসদ সদস্য। বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের মন্ত্রিসভার অপর তিন সদস্যের বিরুদ্ধেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরোধিতার অভিযোগ উঠেছে। মন্ত্রিসভার আরও বেশ কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে। দলের সচিবালয়ের কয়েকজন সদস্য জানান, অনেক ক্ষেত্রেই বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। কেন্দ্রের বারবার নির্দেশনা সত্ত্বেও রহস্যজনক কারণে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নীরব রয়েছেন জেলার কয়েকজন নেতা। এ ক্ষেত্রে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে এসেছে আলোচনায়। এদিকে ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের ফলাফল প্রকাশে এমপিদের ভূমিকা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।