ইসি গঠন নিয়ে সংলাপ: মুখ বন্ধ খামে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঁচজনের নাম
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ডাকা সংলাপে অংশ নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে আইন প্রণয়নসহ তিনটি প্রস্তাব দিয়েছে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। সার্চ কমিটির জন্য চারজন এবং নির্বাচন কমিশনার পদে একজনকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের প্রস্তাবনা খামে রাষ্ট্রপতির কাছে নামের তালিকা দিয়েছেন- যা প্রকাশ করা হয়নি।
ইসি গঠনের সংলাপে প্রথম পক্ষ হিসেবে সোমবার বিকেলে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জাপার আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সার্চ কমিটি ও ইসির জন্য নাম প্রস্তাবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের চেয়ারম্যানকে। তিনি সরাসরি রাষ্ট্রপতির কাছে নামের তালিকা হস্তান্তর করেন – এমন কিছু যা প্রতিনিধি দলের বাকিরা অবগত ছিলেন না।
তবে জাপার প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য বলেন, সার্চ কমিটির জন্য আপিল বিভাগের বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক, পিএসসি ও ইউজিসির চেয়ারম্যানের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই নেতা জানান, নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সাবেক আমলাদের নাম প্রস্তাব করেছেন জিএম কাদের। তাদের মধ্যে একজনের নাম আলোচনায় থাকলেও নাম নিশ্চিত করতে পারেনি ।
সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, রাষ্ট্রপতি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে সব রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সহযোগিতা কামনা করেছেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে জাতীয় নির্বাচনসহ সব নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দুই ঘণ্টা আলোচনা শেষে বঙ্গভবনের সামনে সাংবাদিকদের জিএম কাদের বলেন, আমি রাষ্ট্রপতিকে বলেছি, একজন যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিতে হবে। কিভাবে করতে হবে তার জন্য আইন দরকার। যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করলে আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পেতে পারি। ”
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, শুধু নির্বাচন কমিশন গঠন করলেই হবে না, তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে নির্বাহী বিভাগ ইসিকে সহযোগিতা করতে বাধ্য। তা করতে ব্যর্থ হলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তারা কী ধরনের শাস্তি পাবে তা উল্লেখ করে আইন প্রণয়ন করা দরকার। তাহলে নির্বাচন কমিশন এই ক্ষমতা দিয়ে যেকোনো বিষয়ে সরকারকে বাধ্য করতে পারবে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। সরকার আগেই বলেছে, সময়ের অভাবে ইসি গঠনে আইন প্রণয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। জিএম কাদের বলেন, সরকার চাইলে আইন করা সম্ভব। জাপা সহযোগিতা করবে। সরকার ব্যর্থ হলে এক সপ্তাহের মধ্যে ইসি গঠনের বিল সংসদে উত্থাপন করতে প্রস্তুত জাপা।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আইন না থাকলে বিকল্প হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে অধ্যাদেশ জারি করার প্রস্তাব দিয়েছেন। আর তা না হলে সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠন করতে চায় জাপা। সার্চ কমিটি গঠনের জন্য চার-পাঁচজন যোগ্য ও নিরপেক্ষ ব্যক্তির নাম রাষ্ট্রপতির কাছে দিয়েছে জাতীয় পার্টি- যা এখনই প্রকাশ করা হবে না।
জিএম কাদের বলেন, সার্চ কমিটি ছাড়া রাষ্ট্রপতি নিজের ক্ষমতায় ইসি গঠন করলে জাপার পক্ষ থেকে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনার একজনের নাম প্রস্তাব করেছেন।
অর্থহীন আখ্যায়িত করে রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। রাষ্ট্রপতি কার অধীনে ইসি গঠন করবেন জাপা নির্বাচনে যাবে কি না জানতে চাইলে জিএম কাদের বলেন, তিনি নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেননি।
দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সালমা ইসলাম, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও বিরোধী দলের চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা উপস্থিত ছিলেন।
নতুন ইসির অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নতুন ইসি গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত জানতে সংলাপের আয়োজন করেছেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতির সংলাপে আরও পাঁচটি নিবন্ধিত দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন জানান, ২৭ ডিসেম্বর তরিকত ফেডারেশন ও খেলাফত মজলিস, ২৮ ডিসেম্বর ওয়ার্কার্স পার্টি, ২৯ ডিসেম্বর বিএনএফ ও ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, বাকি দলগুলো আলোচনার তারিখ নির্ধারণ করেনি। সংলাপের মাঝখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে।
গতবারও রাষ্ট্রপতি সংলাপ ও সার্চ কমিটির মাধ্যমে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে ইসি গঠন করেছিলেন। যদিও বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, নুরুল হুদা কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ। তাদের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠুহয়নি।