জাতীয়

ইসি গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপ।’অর্থহীন’ বলে বিএনপির অনীহা, বিকল্প চিন্তা

আসন্ন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতির ডাকা সংলাপকে ‘অর্থহীন’ বলে অভিহিত করেছে বিরোধী দল বিএনপি। নীতিগতভাবে বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো সংলাপে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এরপরও দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দলটি সিদ্ধান্ত নেবে।

সংলাপের আহ্বানের প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে সমমনা দল ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতা ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র নেতারা। এই আলোচনার মধ্যেও সংলাপ বর্জন করতে রাজি হলে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে তাদের অবস্থান জানানোর কথা ভাবছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার বলেন, অতীতে রাষ্ট্রপতির ডাকা সংলাপে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। কোনো সংলাপে জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি। এগুলো শোকেস আর ‘ইওয়াশ’ ছাড়া আর কিছুই নয়। দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছে। আমরা গতবার রাষ্ট্রপতির সংলাপেও গিয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে গৃহীত পদক্ষেপে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত প্রতিফলিত হয়নি।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পছন্দের দলের লোকজন নিয়ে কমিশন গঠন করা হয়েছে। এর মূল্য দিতে হচ্ছে পুরো জাতিকে। আওয়ামী লীগ নির্লজ্জ ও দলীয় কমিশনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ধ্বংস করেছে। তাই নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করাই আমাদের প্রধান অবস্থান। এরপরও রাষ্ট্রপতির চিঠি পেলে দলীয় ফোরামে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করব।

কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির ডাকা সংলাপ আমলে না নিলেও দলটি ‘হোমওয়ার্ক’ করছে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে। তারা ডান, বাম ও ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি বিএনপি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নেতা, নির্বাচন কমিশন বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মতামত চাচ্ছে। দলের বাইরের সমমনাদের মতামতও তারা বিবেচনায় নেবেন। এ মামলায় দলের নেতারাও সহানুভূতিশীলদের তাদের অবস্থান জানাচ্ছেন। দলের সর্বোচ্চ ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে শুভানুধ্যায়ীদের মতামত নিয়ে দলের নেতাদের বর্তমান অবস্থান পর্যালোচনা করা হবে। সেখানে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে নীতিগতভাবে দলটি এখনো সংলাপে যোগ দেয়নি।

এদিকে গত নির্বাচনের আগে গঠিত বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরামের একাংশের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, রাষ্ট্রপতিকে সংলাপে যোগ দিতে হবে। দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, কমিশন গঠনে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে তাদের মতামত প্রকাশ করতে হবে। বর্তমানে জোট নিষ্ক্রিয় থাকলেও ঐক্যফ্রন্ট বহাল রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে যুক্তফ্রন্টের শীর্ষ নেতার বক্তব্যের প্রতি বিএনপির সিনিয়র এক নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি এ কথা বলেন। কামাল হোসেনের দল বড় নয়। রাষ্ট্রপতির সংলাপে গেলে তারা সম্মানিত বোধ করেন। বিএনপি সে জায়গায় নেই। আপনি অন্য লোকেদের প্রতি যে সহায়তা প্রদান করেন তার সাথে আপনাকে আরও বৈষম্যমূলক হতে হবে।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার গতকাল বলেছেন, বিএনপি সংলাপে যাবে কি যাবে না সেটা দলীয় বিষয়। যদিও এই সংলাপ সম্পূর্ণ অর্থহীন। বঙ্গভবনে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই হবে না। অতীতেও একই ঘটনা ঘটেছে। কারণ রাষ্ট্রপতির কোনো ক্ষমতা নেই। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে কমিশন গঠন করবেন। এমতাবস্থায় দল সমর্থিত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত সার্চ কমিটি যে নামই প্রস্তাব করুক না কেন- সরকার যাকে চাইবে তিনিই হবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার আইন প্রণয়নের বিষয়ে আমরা আইনমন্ত্রীকে সুজনের পক্ষে একটি খসড়াও দিয়েছিলাম। তিনি আমাদের আরও বলেন, তারা একটি খসড়াও তৈরি করেছে। তারা অধ্যাদেশ জারি করে এটা করতে পারত। কিন্তু নিজেদের স্বার্থ বিপন্ন হওয়ার ভয়ে তারা তা করেনি। এ অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপে অতীতের মতো জনমতের প্রতিফলন ঘটার কোনো কারণ নেই।

বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা বলেছেন, অতীতে বিভিন্ন সংলাপ ও নির্বাচনে বিএনপিকে সম্পৃক্ত করে আওয়ামী লীগ তাদের ‘গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে’ বৈধতা পেয়েছে। মূলত তারা দেশে-বিদেশে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতাকে কাজে লাগিয়েছে।

মন্তব্য করুন