• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ধাপে ধাপে বিক্রি হন বিদেশগামী কর্মীরা

    সৌদি আরবে ৪৫ কর্মী পাঠানোর অনুমতি পেয়েছে রিক্রুটিং এজেন্সি খন্দকার ওভারসিজ। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মসংস্থান শাখার জারি করা পারমিট অনুযায়ী, বিদেশ যাওয়ার খরচ বা অভিবাসন খরচ বাবদ শ্রমিকদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ৫৩,৫০০ টাকা নেওয়া যেতে পারে। গত ২৬ নভেম্বর এ নিয়োগ দেওয়া হয়। বিদেশি কর্মী নিয়োগে সরকার সবসময়ই এভাবে ব্যয় নির্ধারণ করে। কিন্তু নির্দিষ্ট খরচ কখনো পূরণ হয় না। কর্মচারীদের নির্ধারিত সীমার চেয়ে কমপক্ষে তিনগুণ বেশি ব্যয় করতে হবে।

    সৌদি আরব যাওয়ার ভিসা পেয়েছেন কুমিল্লার ফরহাদ হোসেন শাওন। তিনি আল জাহান ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স নং ১৩৩১) নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে যাচ্ছেন। তাকে দিতে হয়েছে সাড়ে চার লাখ টাকা।

    প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সৌদি আরবে পাঠাতে খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। শন বলেন, তিনি জানেন না সরকার অভিবাসন খরচ নির্ধারণ করছে।

    শাওনের বিদেশ সফরের শুরু ও শেষ খুঁজতে খরচ হয়েছে তিনগুণ। সে এক আত্মীয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তিনি তাকে টাকা দেন। পরে ঢাকার মতিঝিলে মিরা ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি সংস্থার কার্যালয়ে মৌখিক সাক্ষাৎকার দেন। কিন্তু ভিসা এলে তিনি দেখেন আল জাহান ইন্টারন্যাশনাল তাকে বিদেশে পাঠাচ্ছে। মীরা ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজের লাইসেন্স নম্বর ৪০১। আল জাহানের মালিক বাকী বিল্লাহ এবং মিরা ইন্টারন্যাশনালের মালিক মতিউর রহমান। শুক্রবার জারি করা এক বিবৃতিতে তারা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, “রাশিয়ার গোয়েন্দাদের বিষয়ে একই ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ একাধিকবার করা হয়েছে। মতিউর রহমান দাবি করেছেন যে শাওন নামে কেউ তাদের সাক্ষাৎকার নেয়নি।

    পরে জানা গেল ভিসা বিনিময় এবং বিদেশিদের ঘন ঘন হাত বিনিময়ের কারণে খরচ এত বেড়েছে। জনশক্তি খাতের তথ্যমতে, একজন বিদেশি চার-পাঁচ হাত বদল করেন। প্রতিটি ধাপে জনশক্তি ব্যবসায়ীরা তাদের ‘কমিশন’ ছেড়ে পরবর্তী ধাপে পাঠায়।

    একই ঘটনা ঘটেছে শাওনের সাথে। কিন্তু বিদেশে যাওয়া কঠিন হবে ভেবে বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি শাওন।

    কেন সরকার নির্ধারিত ব্যয়ের চার থেকে পাঁচ গুণ ব্যয় করে, জানা গেছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রমিকদের কাছ থেকে। বিএনপি নেতা ও ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাকের মালিকানাধীন খন্দকার ওভারসিজের বনানী অফিসের টেলিফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হয়। সেখান থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হবে বলে জানানো হয়। তাদের বলা হয়, নিয়োগের অনুমতিপত্রে মাত্র ৫৩ হাজার টাকা লেখা আছে। একথা শুনে টেলিফোন লাইন কেটে যায়।

    পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবু আশফাক দাবি করেন, সরকার নির্ধারিত ব্যয়ের চেয়ে বেশি টাকা নেন না তারা।

    গত রোববার বনানীতে সংগঠনটির কার্যালয়ের সামনে কথা হয় দুই কর্মচারী ও কর্মী নিয়োগে কর্মরত এক ব্যক্তির সঙ্গে। তাদের বিদেশ সফর ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় তারা নাম প্রকাশ করেনি। চাঁদপুরের এক কর্মচারী জানান, এতে তার খরচ হয়েছে তিন লাখ টাকা।

    একজন ব্যক্তি যিনি কর্মী সংগ্রহের জন্য কাজ করেছিলেন তিনি বিস্তারিত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সৌদি আরব থেকে যে প্রতিষ্ঠান কর্মী নিচ্ছে তাদের কাছ থেকে প্রতি ভিসা এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা কিনতে হয়। আইনি দ্বারা নিষিদ্ধ হলেও রিক্রুটিং এজেন্সি ভিসা কিনে নেয়। এমপ্লয়মেন্ট পারমিট অনুযায়ী বিমান ভাড়া নিয়োগকর্তার দেওয়ার কথা থাকলেও তারা তা দেয় না। বিমান ভাড়া এখন প্রায় রুপি। তারপর যারা গ্রামে নিয়োগ বা বিপণনের কাজ করেন, তাদের দিতে হয় শ্রমিকপ্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আবার অনেক রিক্রুটিং এজেন্সির ভিসা নেই। কিন্তু ব্যবসাকে সচল রাখতে তারা কর্মী নিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। কর্মী নিয়োগের সময় জনপ্রতি ১০থেকে ২০ হাজার টাকায় ভিসা আছে এমন নিয়োগকারীদের কাছে তারা ‘বিক্রয়’ করে।

    গত সোমবার দুবাইয়ের ড. ইমরান হোসেন ও সিঙ্গাপুর মো. ইলিয়াস ও রাসেল হোসেনের সঙ্গে। তিনজনই জানান, নিয়োগের অনুমতি কী তা তারা জানেন না। তাদের একজন বিদেশ যাওয়ার জন্য ৩ লাখ ৭০,০০০ টাকা এবং অন্য ৪ লাখ ২০,০০০ টাকা দিয়েছে। কেউ ব্যাংকের মাধ্যমে নয়, আত্মীয় বা স্থানীয় দালালের মাধ্যমে এজেন্সিকে অর্থ প্রদান করেছেন।

    ব্র্যাকের ইমিগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান ইমিগ্রেশন এক্সপেন্ডিচার ডিটারমিনেশন কমিটির সদস্য। তিনি বলেন, পুরোটাই কাগজে-কলমে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। বাস্তবে কেউ তা মানে না। এবং যে খরচ নির্ধারণ করা হয় তা বাস্তবসম্মত নয়। কম খরচে সাফল্য দেখানোর জন্য নির্ধারিত হয়। দুই লাখ টাকা খরচ হলে দুই লাখ টাকা নির্ধারণ করতে হবে, যাতে সবাই তা মেনে চলে।

    মন্তব্য করুন