• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ইসি গঠনে সংলাপে বসছেন রাষ্ট্রপতি

    রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসেছেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ। উদ্দেশ্য একটি ‘স্বাধীন, সার্বভৌম, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, শক্তিশালী ও কার্যকর’ নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন। আগামী সপ্তাহে সংলাপ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চলমান সংলাপে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। প্রথমত, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পরিকল্পনা রয়েছে। তারপর অন্যদের। তবে নিবন্ধন না থাকায় সংলাপে অংশ নিতে পারবে না জামায়াতে ইসলামী। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ইসি পুনর্গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের পর সুবিধাজনক সময়ে সংলাপ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে সংলাপ শেষ করতে প্রস্তুত। এ জন্য একদিন তারা একাধিক রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বসবেন।

    কোন রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে তা এখনো ঠিক হয়নি। তবে সংসদে বিরোধী দলগুলো প্রথম দিনের সংলাপে অংশ নিতে পারে। মাঝ পর্যায়ে ডাকা হতে পারে আওয়ামী লীগকে। এর আগে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

    সংবিধানে ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের কথা বলা হলেও কোনো সরকারই সে পথ অনুসরণ করেনি। সংবিধানের আরেকটি অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া ক্ষমতা অনুযায়ী কমিশন গঠন করা হচ্ছে। সংবিধানের 118 অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতিকে সিইসি নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এবং চারজনের বেশি নির্বাচন কমিশনার নয়। গত কয়েক মেয়াদে সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন।

    প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান নতুন ইসি গঠনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছেন। ২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর শুরু হওয়া সংলাপে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। ওই সংলাপের পর ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সার্চ কমিটি গঠন করে ইসি গঠন করা হয়।

    বর্তমান ইসির মেয়াদ দুই মাস। বর্তমান ইসির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি। এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপতি একটি নতুন কমিশন গঠন করবেন, যার অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের ইসির স্বচ্ছতা নিয়ে নানা সময়ে বিতর্ক হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের কেউ কেউ প্রশ্নও তুলেছেন।

    রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত সার্চ কমিটি। চার সদস্যের সার্চ কমিটি সিইসি পদে দুইজন এবং নির্বাচন কমিশনার পদে ১০ জন প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করে। এদের মধ্যে সাবেক সচিব কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ, সিইসি ও আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ, জাবেদ আলী ও মো: শাহনেওয়াজকে কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়। জিল্লুর রহমান।

    2018 সালে, রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ দ্বারা অনুরূপ সংলাপের আয়োজন করা হয়েছিল। একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংলাপ শুরু হয়। এক মাসে তিনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ ৩১টি দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করেছেন। দলগুলো নির্দলীয় ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচন কমিশন গঠন, সার্চ কমিটি ও ইসি গঠন সংক্রান্ত আইন প্রণয়নসহ বিভিন্ন পরামর্শ নিয়ে আসে।

    সংলাপ শেষে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ আগামী ২৫ জানুয়ারি ২০১৭ ইসির নতুন সদস্য কারা হবেন তা জানতে ছয় সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠন করেন। কমিটির সদস্যরা ছিলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, ডক্টর মোহাম্মদ সাদিক। , মাসুদ আহমেদ, অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম ও অধ্যাপক শিরিন আক্তার। কমিটিকে দশ কার্যদিবসের মধ্যে সিইসিসহ অন্য কমিশনারদের নাম সুপারিশ করতে বলা হয়। চার দফা বৈঠক ছাড়াও সার্চ কমিটি প্রথমে ১২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং পরে আরও চারজনের সঙ্গে বৈঠক করে। এছাড়া রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া ৩১টি দলের মধ্যে ২৬টি দলের মধ্যে ৫টির নাম নিয়েছে তারা। সার্চ কমিটি ১৩০ জনের মধ্যে ২০ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করেছে। তারা ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের কাছে ১০ জনের নাম দেন। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি সিইসি এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেন। কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশনাররা ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

    রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ এবার কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসবেন তা এখনো ঠিক হয়নি। তবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ (ইনু), ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা রয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

    মন্তব্য করুন