মিরপুরে গুজব ছড়িয়ে হামলা ও ভাংচুর।ষড়যন্ত্র দেখছেন পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা
হঠাৎ মজুরি বাড়ানোর দাবিতে রাস্তায় নাশকতা ও শ্রমিকদের বিক্ষোভসহ হামলাকে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। দেশে ও পোশাক খাতের বিরোধীরা পর্দার আড়ালে শ্রমিকদের নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা। বুধবার বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠকে পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারা এ আশঙ্কার কথা জানান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তারা মন্ত্রীর কাছে সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এ সময় সাধারণ শ্রমিকরা যাতে কোনোভাবে হয়রানির শিকার না হন সেজন্য মন্ত্রীকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানান উদ্যোক্তারা।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে আইন অনুযায়ী সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শ্রমিক অসন্তোষের নেপথ্যে ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়েও তথ্য নেওয়া হচ্ছে। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, সংগঠনের তিন সাবেক সভাপতি সাফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এমপি, আবদুস সালাম মুর্শেদী এমপি ও সিদ্দিকুর রহমান; এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ এবং বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি।
ষড়যন্ত্রের প্রমাণ হিসেবে উদ্যোক্তা নেতারা বলেছেন, অন্যান্য দেশ যখন করোনার ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন দেশের পোশাক খাত এখন পর্যাপ্ত রপ্তানি অর্ডার পাচ্ছে। দুই মাস ধরে রেকর্ড হারে রপ্তানি বাড়ছে। গত মাসে বিভিন্ন দেশে ৪ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। দেশের রপ্তানির ইতিহাসে এক মাসে এত বেশি রপ্তানি হয়নি। অক্টোবরের রপ্তানিও আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এই সাফল্য দেশবিরোধীরা সহজে মেনে নিতে পারছে না। তারাই এই আন্দোলনের পেছনে। দেশবিরোধী দালালরা নতুন করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে।
বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেন, এটা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র মাত্র। কারণ সরকার তিন বছর আগে মজুরি বাড়িয়েছে। মজুরি বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি বছরই নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট দিয়ে যাচ্ছেন মালিকরা। করোনা এত বড় ধাক্কা দিয়েছে। এমতাবস্থায় হঠাৎ ডেকে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সহিংস আন্দোলন কেন? এদেশের কোনো শ্রমিক তা করতে পারে না। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, হামলাকারীদের বড় অংশের পোশাক সাধারণ শ্রমিকদের মতো নয়। কিছু শ্রমিকের পেছনে ষড়যন্ত্রকারী রয়েছে। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা। তবে সাধারণ শ্রমিকদের কোনোভাবেই হয়রানি না করতে মন্ত্রীকে অনুরোধ করা হয়েছে। এস এম মান্নান কচি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত। মন্ত্রী বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হঠাৎ মজুরি বৃদ্ধির পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলেও মনে করেন শ্রমিক নেতারা। কারণ, এখন মজুরি বাড়ানোর সময় নয়। এটা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি গতকাল বলেন, দুটি কারখানায় মজুরি বকেয়া ছিল। ষড়যন্ত্রকারীরা সেই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে। কিছু বিদেশী এনজিও দীর্ঘদিন ধরে পোশাক খাতকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। সরকার কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না তা বোঝা যাচ্ছে না।
মিরপুরের পল্লবী ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ও পুলিশ বক্সে কর্মীর মৃত্যুর গুজবে ভাংচুর করা হয়েছে। কে বা কারা শ্রমিকদের মধ্যে গুজব ছড়ালো- মিরপুর ১৩ নম্বর সেক্টরে মঙ্গলবার কয়েকজন পোশাক শ্রমিকের ওপর হামলার শিকার হয়েছেন স্থানীয় দোকানদাররা। আহত হয়েছেন দুইজন। আহতদের মধ্যে একজন পরে মারা যান। এসব গুজব ছড়ানোর পর গতকাল শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে। অনুসন্ধানে জানা গেছে যে আসলে কোন শ্রমিক মারা যায়নি। আহত দুজনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর ও কাফরুল থানা সড়ক এলাকায় বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। এ সময় কাফরুল থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। মিরপুর-১০ ট্রাফিক পুলিশ বক্সও ভাঙচুর করা হয়েছে। দুপুরের দিকে মিরপুর ও কাফরুল এলাকায় অন্তত সাত-আটটি পয়েন্টে শ্রমিকরা অবস্থান নেয়। এ সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পথের কোথাও তারা টায়ার জ্বালিয়েছে। এ সময় অনেক শ্রমিকের হাতে লাঠি, কাঠের টুকরো ও লোহার পাইপ দেখা যায়। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে শ্রমিকদের বিক্ষোভ। আজ আবারও রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়ে সড়ক ছাড়েন শ্রমিকরা।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শ্রমিক লাল মিয়া বলেন, আমরা ১০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ১০ দিন ধরে আন্দোলন করছি। এখন আমাদের ওপর হামলা হচ্ছে। হামলায় লালন নামে এক শ্রমিক নিহত হন। তবে লালন মিয়ার পাশে থাকা আরও কয়েকজন শ্রমিক জানান, লালন বেঁচে আছেন। তিনি নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন।