আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস।করোনা আক্রান্তের রোগীদের প্রায় ৬৩% ডায়াবেটিস রোগী
নীরব প্রাণঘাতী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশেও শহর থেকে গ্রামীণ, শিশু থেকে বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবার মধ্যেই এই রোগটি ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে। যে হারে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তাতে দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এতে ভুগছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের (বাডাস) জরিপেও এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। জরিপ অনুযায়ী, দেশের ২৫.৬ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ফলে মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশের বেশি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। চলমান বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারী ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আরও ঝুঁকি তৈরি করেছে।
বিভিন্ন বৈশ্বিক গবেষণা ও দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীদের পর্যালোচনায় দেখা যায় যে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে ক্যাভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। গত সাত সপ্তাহে দেশে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ৮৩ শতাংশের ডায়াবেটিস ছিল। একই সময়ে, ৬৫ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগী করোনা সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পর কোনো না কোনো দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতায় ভোগেন। আবারও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর বহু মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালে করোনা আক্রান্তের মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে একজনের ডায়াবেটিস ধরা পড়ে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাডাসের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এ কে আজাদ খান বলেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম। ফলস্বরূপ, তারা যে কোনও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। সুতরাং, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিদের করোনভাইরাস থেকে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি। অনেকের ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিলতা রয়েছে। এই মানুষদের বয়স ৭০ বছরের বেশি হলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম থাকে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে করোনায় মৃত্যুর পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ষাটের দশকে মানুষের মৃত্যুর হার বেশি।
দেশে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ডায়াবেটিসের সেবা নিতে আর দেরি নেই’। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষ্যে শনিবার বাদাসের উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। শনিবার বারডেম মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দিবসটি উপলক্ষে সংগঠনের পক্ষ থেকে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরা হয়।
করোনা আক্রান্তদের ৮৩% ডায়াবেটিস রোগী: স্বাস্থ্য অধিদফতরের গত সাত সপ্তাহের ক্লিনিকাল পর্যালোচনার বিশ্লেষণে দেখা যায়, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ৭৩ শতাংশের মধ্যেই করোনা ধরা পড়েছে। অন্যান্য রোগের তুলনায় ডায়াবেটিস রোগীদের করোনাভাইরাস সংক্রমণের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এরপর থেকে উচ্চ রক্তচাপ, বক্ষব্যাধি, হৃদরোগ, কিডনি, লিভারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
বয়স্ক ডায়াবেটিস রোগীদের করোনা আক্রান্তের মারা যাওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। যে কোনো ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের বয়স ৪০ বছরের বেশি হলে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। করোনা উপসর্গ নিয়ে যুক্তরাজ্যের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে তিনজনের একজনের ডায়াবেটিস ছিল।
ওষুধসহ বিনামূল্যে ইনসুলিন দেওয়ার উদ্যোগ : স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের নিয়েও সরকার উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে ডায়াবেটিসের প্রায় সব ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্যয়বহুল এই রোগের চিকিৎসায় বিনামূল্যে ইনসুলিন দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।