৫৮ তম জন্মদিন।শেখ রাসেলের প্রতি ভালোবাসা
‘তুই তো গল্পের বই, খেলনা নিয়ে / তবুও পৃথিবী আজ এমন পিশাচী হলো ।
দুই বাংলার বিখ্যাত কবি ও লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ‘শিশুরক্ত’ কবিতায় এইভাবে একটি শিশুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মর্মান্তিক কাহিনী তুলে ধরেছেন, যদি তিনি বেঁচে থাকতেন তাহলে আজ ৫৮ বছরে পা দিতেন। তিনি হতে পারতেন বাঙালি জাতির মুক্তির আরেক পথপ্রদর্শক। কিন্তু হত্যাকারী গ্যাং, পরিবারের সদস্যদের সাথে, একটি ১০ বছরের শিশুর কচি বুককেও ছিঁড়ে ফেলেছিল একটি পৈশাচিক উল্লাসে গুলি।
বঙ্গবন্ধু পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য শেখ রাসেল, যিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নং বঙ্গবন্ধু ভবনে ১০বছর বয়সে মারা যান। তিনি তখন ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। সেদিন রাসেল ছাড়াও তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মা বেগম শেখ ফজিলাতুন নেশা মুজিব, দুই ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামাল, দুই ভগ্নিপতি সুলতানা কামাল এবং রোজি জামাল এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও নিহত হন। পৈশাচিক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার শেখ রাসেল যেন বেদনার মহাকাব্যের নাম।
আজ ১৮ অক্টোবর। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ রাসেল তার ৫৮ তম জন্মদিন পালন করেছেন। ১৯৬৪ সালের এই দিনে তিনি ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালন করবে।
শেখ রাসেলের জন্মের সময়, পাকিস্তান জুড়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পুরোদমে চলছিল। একদিকে রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান, অন্যদিকে যৌথ বিরোধী প্রার্থী মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতেমা জিন্নাহ। এমনকি রাসেলের জন্মদিনেও বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রামে ছিলেন ফাতেমা জিন্নাহর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। সেদিনের কথা মনে করিয়ে দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরে একটি প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘রাসেলের জন্মের আগের মুহূর্তগুলো খুবই উদ্বেগজনক ছিল। বাড়িতে আমি, কামাল, জামাল, রেহানা এবং খোকা চাচা। বড়-চাচা আর বড়-মামার সাথে। একজন ডাক্তার এবং একজন নার্সও এসেছিলেন। সময় কাটবে বলে মনে হয় না। জামাল আর রেহানা কিছুক্ষণ ঘুমিয়েছিল, তারপর আবার জেগে উঠল। আমরা ঘুমন্ত চোখে জেগে আছি নতুন অতিথির আগমনের কথা শোনার অপেক্ষায়। আমার চাচা বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে আমাকে বললেন যে আমাদের এক ভাই হয়েছে। শীঘ্রই আবার দেখা হবে! আমার চাচা বললেন তিনি ফোন করবেন। কিছুক্ষণ পর কল এল। বড় চাচা রাসেলকে আমার কোলে দিলেন। মাথায় ঘন কালো চুল। তুলতুলে গাল। রাসেল বেশ বড় ছিল। ‘
বঙ্গবন্ধু দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের লেখার দারুণ ভক্ত ছিলেন। যখনই তার সময় হতো, তার স্ত্রী বেগম শেখ ফজিলাতুন রাসেলের লেখা থেকে নেশা মুজিবের কাছে পড়তেন। স্বামীর মতো বেগম মুজিবও দার্শনিক রাসেলের ভক্ত হয়ে যান। তাই রাসেল সবচেয়ে ছোট সন্তানের নাম রাখেন। পারিবারিক উপাধি যোগ করা হয়েছে – শেখ রাসেল।
একইভাবে বঙ্গবন্ধুও রাসেলকে যতটা সম্ভব কাছে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। দেশ স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হন। সেই সময় বঙ্গবন্ধু তার প্রিয় সন্তানদের বিশেষ করে আদরের রাসেলকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বিদেশে বা দেশের ভেতরে গেলে রাসেলকে সঙ্গে নেওয়ার চেষ্টা করতেন। এমনকি গণভবনেও মাঝে মাঝে তিনি সঙ্গে নিয়ে যেতেন।
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ঘাতকরা তাকে হত্যা করে বাঙালি মহান বীরের রক্তের উত্তরাধিকার মুছে দিতে চেয়েছিল। সেই শেখ রাসেল আজ বাংলাদেশের শিশু, কিশোর, তরুণ এবং সচ্ছল মানুষের ভালোবাসার নাম। আজ, তিনি অবহেলিত, পিছিয়ে পড়া এবং বঞ্চিত চিলের জন্য আলোকিত জীবন গড়ার প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ শহরাঞ্চলে একজন মানুষ হয়ে উঠেছেন।