বিজ্ঞান ও প্রজক্তি

বিশেষ লেখা।শিশুকে ভালবাসা এবং স্নেহের মাধ্যমে শৃঙ্খলা শেখানো উচিত

সমাজে পরিবর্তন এসেছে। ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে। ফলে মানুষের জীবনধারাও বদলে গেছে। ডিভাইসের মাধ্যমে আরও যোগাযোগ রয়েছে। মানুষের সাথে মানুষের দেখা হওয়ার সম্ভাবনা কম। ইন্টারনেটে খুব দ্রুত সম্পর্কের সাথে জড়িত হওয়া, যা খুব দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক নয়। বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। সমাজের সর্বক্ষেত্রে পতন হয়েছে। এর প্রভাব শিশুদের উপরও পড়ছে। করোনার চাপ কাটিয়ে উঠতে হবে। এ সময় শিক্ষার্থীদের ঘুরে বেড়ানোর কথা। কিন্তু তারা বাড়িতে বন্দী ছিল। গবেষণা বলছে কিশোর বয়সে তারা যে ক্ষতি করেছে তা পূরণ করতে অনেক সময় লাগবে।

হতাশা, উদ্বেগ, বিষণ্নতা এবং একাকীত্ব আত্মহত্যার পিছনে কাজ করে। বিষণ্নতা এবং উদ্বেগ আমাদের সব অংশ। কিন্তু যখন এটি ক্লিনিকাল পর্যায়ে বা অসুস্থতার পর্যায়ে যায়, তখনই সমস্যা। পটভূমিতে কোনো আঘাতমূলক ঘটনা ঘটলে অনেকেই মানসিক রোগে ভোগেন।

অনেক পরিবার শিশুকে মূল্য দেয় না; এই ভাবে আমরা তাদের বড় না। যখন তারা বড় হয়, সিদ্ধান্ত তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। তাদের মতামতের কোন মূল্য নেই। সন্তানকে স্নেহের আলিঙ্গনে রাখতে হবে। আমরা তাকে ভালবাসতে হবে। কিন্তু আমরা শিশুকে কষ্ট সহ মানুষ করতে চাই। শৃঙ্খলা অবশ্যই ভালোবাসার মাধ্যমে শেখাতে হবে। অনেক পরিবার জানে না কিভাবে একজন ভালো মানুষ হতে হয়। পড়াশোনায় মনোযোগ দিলেও ভালো করার চেষ্টা কম থাকে। বাচ্চারা বড় হয়ে নিজেদের মূল্যায়ন করে না। অধিকাংশ শিশু আত্মসম্মান নিয়ে বড় হতে পারে না। শিশুদেরও সম্মান করা দরকার। আমাদের তার মতামত নিতে হবে।

এ বিষয়ে আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই। উন্নত দেশগুলোতে স্কুলগুলিকে বলা হয় মানবসৃষ্ট কারখানা। যিনি সেখানে সবচেয়ে বেশি শিশুদের বিকাশ করতে পারেন তিনিই শেখান। কিন্তু আমাদের দেশে এমন প্রশিক্ষিত শিক্ষক নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জীবন দক্ষতা অর্জিত হচ্ছে না। এখন স্কুলে বেত দিয়ে শারীরিক নির্যাতন না হলেও অনেক প্রতিষ্ঠানে মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে।

যখন একজন ব্যক্তি আবেগগতভাবে আঘাতপ্রাপ্ত বা ব্যর্থ হয়, তার জন্য পরিবার এবং বন্ধুদের সহানুভূতি প্রয়োজন। অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের আবেগগতভাবে সমর্থন করা প্রয়োজন। এবং আপনাকে মানসিক বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিতে শিখতে হবে। যদি কোনো অভিভাবক দেখেন তাদের সন্তানের আচরণ হঠাৎ অস্বাভাবিক মনে হয়, তাদের উচিত এটি একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নেওয়া। উপরন্তু, এই সময়ে অভিভাবকদের অন্যতম দায়িত্ব হল স্কুল-কলেজের শিশুদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া।

যখন মানুষ আত্মহত্যার প্রবণ হয়, তখন তারা সাহায্য চায়। আগের মত কেউ পরিবারের সাথে কোথাও যায় না, কথা বলে না। মানুষ থেকে মানুষের যোগাযোগ এখন যন্ত্রের মাধ্যমে একটু বেশি হচ্ছে। পরিবারে চারজন থাকতে পারে। বাড়ি ফিরে, চারজনই চারটি মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা করছে। যদি কেউ খিটখিটে মেজাজে থাকে, তাহলে হয়তো বেশি খাওয়া বা কম খাওয়া। দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা, একটু রাগ হওয়া, মানুষকে কষ্ট দেওয়া, দৈনন্দিন কাজকর্মে ধীরগতি, দুশ্চিন্তা সবই হতাশার লক্ষণ। পিতা -মাতার মধ্যে নেতিবাচক সম্পর্কের কারণে শিশুও হতাশায় ভোগে। আবার ডিভোর্সের কারণে দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির কারণে শিশুদের সঙ্গে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মেলামেশা বন্ধ হয়ে যায়। শিশুরা মানসিক চাপে থাকে।

বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এই বিষয়ে কয়েকটি ‘প্রতিষ্ঠান’ বা সংস্থা আছে, কিন্তু সেগুলি অপর্যাপ্ত। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য আরও প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন।

লেখক: অধ্যাপক, শিক্ষা ও পরামর্শ মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য করুন