পঞ্চগড়ে চুরির সন্দেহে যুবদল কর্মীকে ধাওয়া, জনতার মারধরে পা ভাঙলো
পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় চুরির সন্দেহে হামিদুল ইসলাম (৩৫) নামে এক যুবদল কর্মীকে স্থানীয়রা মারধর করেছে এবং তার বাম পা ভেঙে গেছে। গত শুক্রবার (৭ নভেম্বর) রাতে উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের ত্রিশুলিয়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গতকাল শনিবার সকালে তাকে উদ্ধার করে আটোয়ারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে গতকাল বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
হামিদুল বোদা উপজেলার ঝালই সালসিরি ইউনিয়নের নতুনহাট দক্ষিণ সালসিরি এলাকার বাসিন্দা। তিনি ওই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের যুবদল কর্মী এবং কামারহাট বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। স্থানীয়রা বলছেন যে, তিনি ৮ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তবে দলটি দাবি করেছে যে তিনি কমিটির সদস্য।
স্থানীয় সূত্রে দাবি করা হয়েছে যে, গত শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে আটোয়ারী উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের ত্রিশুলিয়া এলাকায় হামিদুল ভবেশ চন্দ্র রায়ের একটি বাড়ির তালা ভেঙে ফেলে। শব্দ শুনে বাড়ির লোকেরা তাকে ধরার চেষ্টা করলে, সে পালিয়ে যাওয়ার সময় বাড়ির পাশের খালে পড়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে ধরে ফেলে এবং গণধোলাই দেয়। সকালে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে আটোয়ারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
ভবেশ চন্দ্র রায় বলেন, আমি মামলা করতে থানায় গিয়েছিলাম। পুলিশ আমাকে আপোষের জন্য স্বাক্ষর করিয়েছে। তারা বলেছে যে যেহেতু সে অসুস্থ, তাই পরে চাইলে মামলা করা যেতে পারে। তাই আমি স্বাক্ষর করে চলে এসেছি। যদি চুরি করার কোনও উদ্দেশ্য না থাকে, তাহলে অন্য এলাকার একজন লোক কেন এত দেরিতে তালা ভেঙে আমার বাড়িতে প্রবেশ করবে?
আটোয়ারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ হুমায়ুন কবির বলেন, যুবকের বাম পা বেশ কয়েকটি জায়গায় ভেঙে গেছে। তার ডান হাতও আহত এবং রক্তক্ষরণ হচ্ছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেছি।
আটোয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, চোর সন্দেহে স্থানীয়রা যুবকটিকে অনেক মারধর করেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায়, ডাক্তাররা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুরে পাঠিয়েছেন। বাদী লিখিতভাবে জানিয়েছেন যে, তিনি এই ঘটনায় অভিযোগ করবেন না।
বোদা উপজেলার ঝালই সালশিরি ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মানিক বলেন, ওই যুবক ওয়ার্ড কমিটির সদস্য। তিনি কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত নন। আমি শুনেছি রাতে বিয়ে থেকে ফিরে এলাকার এক মহিলার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেখানে চোর সন্দেহে স্থানীয়রা তাকে মারধর করে। আমি শুনেছি তার পা ভেঙে গেছে।
তবে, এ বিষয়ে জানতে হামিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে, আটোয়ারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হামিদুলকে ভর্তি করার সময় দেওয়া নম্বরে ফোন করলে তার বোন জামাই সাফিয়ার রহমান ফোনটি রিসিভ করেন। তিনি বলেন, অসুস্থতার কথা শুনে আমি হাসপাতালে ছুটে যাই। তবে, কেন তাকে মারধর করা হয়েছে তা আমি জানি না।

