• বাংলা
  • English
  • আন্তর্জাতিক

    সিএফআইএসএসের ওয়েবিনার।মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে

    প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বমঞ্চে মানবতার এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে এত অতিরিক্ত মানুষের দায়িত্ব নেওয়া এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। যদিও শরণার্থী প্রতিরক্ষায় আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশগুলির সম্মতিতে পূর্বে গৃহীত সনদ ও সুপারিশগুলি সে সময়ে প্রযোজ্য ছিল, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ক্রমাগত পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে এবং বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর কার্যকারিতা গ্রহণযোগ্য নয়। অতএব, সময় এসেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এমন নীতি গ্রহণ করার, যা বর্তমান রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সহায়ক হবে। গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত একটি ওয়েবিনারে এই অভিমত প্রকাশ করা হয়। সেন্ট্রাল ফাউন্ডেশন ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (সিএফআইএসএস) আয়োজিত রোহিঙ্গা বিষয়ক এটি ছিল চতুর্থ ওয়েবিনার।

    ‘মানবিক আদর্শ, জাতীয় নিরাপত্তা এবং বাংলাদেশের রোহিঙ্গা নীতি’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান বক্তা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আ স ম আলী আশরাফ মডারেটর ছিলেন কমডোর (অব.) মোহাম্মদ নুরুল আবশার, সেন্ট্রাল ফাউন্ডেশন ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সভাপতি ওয়েবিনারের শুরুতে তার স্বাগত বক্তব্যে আবশার বলেন, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। কিন্তু এত বড় জনসংখ্যার সাথে, ভুটানের সমগ্র জনসংখ্যার চেয়েও বেশি, বাংলাদেশের পক্ষে ভবিষ্যতের নিরাপত্তা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়া আর সম্ভব নয়। বাংলাদেশের পদক্ষেপের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা অবশ্যই আমাদের পররাষ্ট্রনীতির সাফল্যের প্রতিফলন ঘটায়। কিন্তু সময় এসেছে এই জনগোষ্ঠীর এই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার। এই লক্ষ্যে, তিনি সব দিক থেকে সামগ্রিক চিত্র বিবেচনা করে একটি টেকসই সমাধানের আহ্বান জানান।

    আলোচনার অংশ হিসেবে, আলী আশরাফ একটি গবেষণা পত্র উপস্থাপন করেন, এতে তিনি শরণার্থী গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়োজক দেশগুলোর শরণার্থী নীতিতে মানবিক মানদণ্ড এবং জাতীয় নিরাপত্তার মধ্যে ভারসাম্য যাচাই করেন এবং এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট তুলে ধরার চেষ্টা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, যদিও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় দিয়েছে, কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে আরো নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা, শরণার্থী সূচক নীতি গ্রহণ এবং এই বিষয়গুলোর কার্যকারিতা নিয়ে আরো বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। আয়োজক দেশের সূচকগুলি তিনটি প্রধান বিষয়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়: আইনি এবং আমলাতান্ত্রিক প্রতিক্রিয়া, আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংস্থার প্রতি মনোভাব এবং আশ্রয়প্রার্থীদের গ্রহণ ও আচরণ। এই তিনটি বিষয়ের ভিত্তিতে তিনি অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয় বিশ্লেষণ করেন এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ নীতি প্রবর্তনের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন। এরপর তিনি শরণার্থী গ্রহণ বিষয়ে তার গবেষণাপত্রে যে দুটি প্রধান তত্ত্ব তাত্ত্বিকভাবে বিবেচনা করেছেন তা নিয়ে আলোচনা করেন এবং বর্তমান রোহিঙ্গা সংকটের ধারাবাহিকতার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, যারা উদার তত্ত্বে বিশ্বাস করে তারা বিশ্বাস করে যে মানবতা এই শরণার্থীদের গ্রহণ করার প্রধান কারণ এবং আশ্রয়ের দেশে তাদের অধিকার এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গা সংকটের ক্ষেত্রে সরকার শরণার্থী প্রবাহের শুরু থেকে এই নীতি অনুসরণ করে এবং সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে এখানে তাদের জীবনযাত্রাকে সহনীয় করে তুলেছে। কিন্তু বাস্তববাদীদের মতে, এখন বাংলাদেশের নিজের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কথা ভাবা উচিত। ইতিমধ্যে, রোহিঙ্গা শিবির স্থাপনের ফলে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে, যার ফলে মানব পাচার ও মাদক চোরাচালানের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, এমনকি চরমপন্থীদের জাগরণও দেখা দিয়েছে। যদিও বাংলাদেশ সরকার এসব প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে, কিন্তু উন্নয়নের এই পর্যায়ে এই অবাঞ্ছিত দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব নয়।

    মন্তব্য করুন