সার সংকটের কারণে ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন
ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা এখন ধানের চারা রোপণের পর মাঠে ব্যস্ত। তবে, তারা রাসায়নিক সারের ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছেন। খুচরা দোকান এবং ডিলারদের কাছে সারের জন্য তাড়াহুড়ো করে যাওয়ার পরও কৃষকরা সময়মতো সার পাচ্ছেন না। অভিযোগ রয়েছে যে সিন্ডিকেট অবৈধভাবে সার মজুদ করে চড়া দামে বিক্রি করছে। প্রশাসনের অভিযানে হাজার হাজার মেট্রিক টন সার জব্দ করা হলেও, ডিলারশিপ বাতিল বা লাইসেন্স স্থগিত করার মতো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব নয় বলে কৃষকরা মনে করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বালিয়াডাঙ্গীতে আবিদ ট্রেডার্স এবং মহির উদ্দিন ট্রেডার্সের গুদাম থেকে ৮৩৯ বস্তা সার জব্দ করা হয়েছে, ৪০,০০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং একটি গুদাম সিলগালা করা হয়েছে। এবং সদর উপজেলার বাড়িয়া বাজারে ব্যবসায়ী ইসরাফিলের গুদাম থেকে ৯৪৭ বস্তা সার জব্দ করার পাশাপাশি কৃষি বিভাগ নাঈম উদ্দিন ট্রেডার্সকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে। কৃষি বিভাগ চলতি আমন মৌসুমে কৃষিপ্রধান জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে ১ লক্ষ ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ইতিমধ্যে ৯০ শতাংশ জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে এবং বাকি ১০ শতাংশ জমিতে আগামী সপ্তাহে রোপণ সম্পন্ন করা হবে। কৃষকদের অভিযোগ, সিন্ডিকেটরা সারের সংকট তৈরি করছে এবং প্রয়োজনীয় সার পাচ্ছে না এবং খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। একদিকে তাদের হয়রানির শিকার হচ্ছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত খরচের সম্মুখীন হচ্ছে। প্রশাসন দাবি করছে যে সংকট মোকাবেলায় নিয়মিত অভিযান চলছে। গত কয়েকদিনে সদর ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় তিনজন ব্যবসায়ীর গুদাম থেকে ১,৭৭৬ বস্তা টিএসপি, এমওপি এবং ডিএপি সার জব্দ করা হয়েছে। সদর উপজেলার আকচা গ্রামের মাঠে কৃষকদের তাদের প্রয়োজনীয় সারের অর্ধেক কিনে জমিতে লাগাতে দেখা যাচ্ছে। নিম্বারি এলাকার কৃষক আরিফ জানান, তিনি ১০ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছেন। জমিতে ওষুধ প্রয়োগের জন্য সার আনতে গেলে একজন ডিলার তাকে মাত্র এক বস্তা দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তা নেননি। আরেক কৃষক রবি জানান, তিনি প্রায় ৯ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছেন। কিন্তু একজন ডিলারের কাছ থেকে তিনি মাত্র দুই বস্তা ইউরিয়া পেয়েছেন। কৃষকরা জানিয়েছেন যে বর্তমানে তীব্র সংকট চলছে। চার বস্তা প্রয়োজন হলেও ডিলাররা মাত্র এক বা দুটি বস্তা দিচ্ছেন। জরুরি ব্যবস্থা না নিলে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, “কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা করেছে। আমরা কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। যদিও এবার বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় কিছুটা কম, তবুও অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্য একটি চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে কৃষকরা সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় সার পান।”