ঢামেকের দৃশ্যপট মুখ দেখে চেনা যায়নি একটি লাশও
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে সহকারী বাবুল মিয়া জানান, ছুটির দিনে মর্গে সাধারণত ভিড় কম থাকে। তবে শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কারখানায় আগুনের নিহতদের মর্গে নিয়ে এলে পুরো এলাকা ভারী হয়ে ওঠে। রূপগঞ্জে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শোকাহতদের কান্নার ঢেউ আছরে পড়ে ঢাকার মর্গ পর্যন্ত। সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। একের পর এক মৃতদেহ মর্গে আসছে; তবে চেহারা দেখে শরীর চেনার কোনও উপায় নেই। যেন এক সাদা বস্তার মধ্যে সব কয়লা এনে দিচ্ছে!
করোনার মহামারীর প্রেক্ষিতে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে রূপগঞ্জের হাশেম ফুড কারখানায় শ্রমিকরা ব্যস্ত ছিলেন। করোনার ভয়ে তারা কারখানার চাকা সচল রেখেছিল, তবে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে একে একে ৫২ জন লোককে নিয়ে যায়। প্রাণ বাঁচাতে কারখানার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আরও তিনজন।
শুক্রবার দুপুর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে পুড়ে আঙ্গার মরদেহগুলি ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে আনা হয়। এরপর তাদের আত্মীয়রা সেখানে ভিড় শুরু করে। লকডাউন বিধিনিষেধ এবং পকেটের অর্থ ব্যয়ে মর্গের সামনে পৌঁছেছে। কিন্তু সন্ধ্যা অবধি লাশ কেউ বুঝে পাননি। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্বজনরা পোড়া কারখানার সামনে জড়ো হয়।
সাজ্জাদ হোসেন সজিবও ছিলেন কারখানার কর্মী। তিনি ওই অঞ্চলে একটি মেসে থাকতেন। আগুনের সূত্রপাত হওয়ার পর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ । বৃহস্পতিবার রাতে তার মামা মাহফুজুর রহমান রূপগঞ্জের কারখানার সামনে ভাগ্নের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কোনও হাদীস পাইনি। অবশেষে তার আদরের ভাগ্নের মরদেহ পেতে মর্গে ছুটে যান।
মর্গের সামনে বিলাপ করে মাহফুজুর জানান, তার ভাগ্নে লকডাউনের মধ্যে জোর করে কাজ করতে গিয়েছিল। এখন আর খুঁজে পাচ্ছি না। এমনকি এত লাশের ভিতরে কাউকে চিনি না। কীভাবে কী করবেন বুঝতে পারছেন না।
কারখানার শ্রমিক জাহানারার স্বামী খোকন মিয়া স্ত্রীকে জীবিত খুঁজে পাওয়ার আশায় সারা রাত কারখানার সামনে ছিলেন। কোথাও খুঁজে না পেয়ে সে ছুটে গেল মর্গে। খোকন মিয়া জানান, রূপগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসতে তাঁকে কঠোর কষ্ট করতে হয়েছে। নিদ্রাহীন রাত কাটানোর পরে, তিনি চারশো টাকায় একটি রিকশা ভাড়া করে মর্গে আসতে সক্ষম হন। তবে কেউই তার স্ত্রী মারা গেছে এবং লাশটি মর্গে রয়েছে তা নিশ্চিত করছে না। তবে পুলিশ নাম-ঠিকানা লিখে নিয়েছে। পুলিশ বলেন যে লাশ পাওয়া মাত্রই বিষয়টি অবহিত করবেন।
রূপগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির মোল্লা লাশ নিয়ে মর্গে এসেছেন। তিনি জানান, আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া কাউকেই চেনা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে মৃতদেহ হস্তান্তর করা সম্ভব নয়। এ জন্য যারা কারখানার নিখোঁজ শ্রমিকদের সন্ধান করছেন তাদের স্বজনদের কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। মৃতদেহ ডিএনএ ম্যাচ করে হস্তান্তর করা হবে।