ঢাকার দুই বড় হাসপাতালে করোনা রোগী বেড়েছে, চালু ‘পোস্ট করোনা ক্লিনিক’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছেছবি: আসাদুজ্জামান
করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পরও যাঁরা নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন, তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেছে দুটি বড় সরকারি হাসপাতাল। গত সপ্তাহে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চালু হয়েছে ‘পোস্ট কোভিড ক্লিনিক’। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ গতকাল থেকে চালু করেছে ‘পোস্ট করোনা ক্লিনিক’।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, মাত্র ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে করোনা থেকে সুস্থ হওয়া যেকোনো ব্যক্তি হাসপাতাল দুটিতে চিকিৎসাসেবা নিতে পারবেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সপ্তাহে তিন দিন (রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার) এবং বিএসএমএমইউ দুই দিন চিকিৎসাসেবা দেবে।বিজ্ঞাপন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত মে মাস থেকে আমরা করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছি। আমাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পরও রোগীদের নানান ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। আমাদের হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা নেওয়ার পর সুস্থ হয়ে যাঁরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন, তাঁদের অনেকে মুঠোফোনসহ নানা মাধ্যমে যোগাযোগ করে জানাচ্ছেন, তাঁরা নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। এসব ব্যক্তির চিকিৎসার কথা মাথায় রেখে আমরা পোস্ট কোভিড ক্লিনিক চালু করেছি।’
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুলফিকার আহমেদ আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ৩ জুলাই আমাদের হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তির মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করেছি। আমাদের অভিজ্ঞতা ও রিসার্চ বলছে, করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা সুস্থ হওয়ার পরও তাঁর ফুসফুসের যে অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তা পুরোপুরি সেরে ওঠে না। ফুসফুসের কিছু অংশ কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত থেকে যায়। করোনা থেকে মুক্ত হওয়ার পরও কিছু জটিলতা থেকে যায়। যিনি ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তিনি করোনামুক্ত হলেও কিন্তু নানান জটিলতা রয়ে যায়, এমন লোকদের কথা মাথায় রেখে পোস্ট করোনা ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। আমাদের হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকেরাই চিকিৎসাসেবা দেবেন।’বিজ্ঞাপনhttps://tpc.googlesyndication.com/safeframe/1-0-37/html/container.html
ঢাকার দুই হাসপাতালে রোগী বেশি:
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, সারা দেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ১৪ হাজার ৮৪৩টি শয্যা রয়েছে। বর্তমানে খালি পড়ে আছে ১১ হাজার ৪৫টি শয্যা। অর্থাৎ ৩ হাজার ৭৯৮ জন করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য ৮০৪টি শয্যা আছে। এর মধ্যে ৬৬৮টিতে রোগী আছেন। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য শয্যা আছে ২২৫টি। আজ রোববার পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ২০৬ জন করোনা রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।
হাসপাতাল দুটির পরিচালকেরা জানিয়েছেন, কোরবানির ঈদের আগে করোনা রোগীর ভর্তির হার কমে গিয়েছিল। কিন্তু কোরবানির ঈদের পর করোনা রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে।বিজ্ঞাপনhttps://tpc.googlesyndication.com/safeframe/1-0-37/html/container.html
বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুলফিকার আহমেদ আমিন বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য শয্যাসংখ্যা ২২৫। রোববার পর্যন্ত ভর্তি আছেন ২০৬ জন করোনা রোগী। অথচ ঈদের আগে ১৭০ থেকে ১৮০ জন করোনা রোগী ভর্তি থাকতেন। বর্তমানে করোনা রোগী দুই শর নিচে নামছেই না। হঠাৎ করে করোনা রোগীর এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কেন, সেটি বুঝতে পারছি না।’
অন্যদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘কোরবানির ঈদের আগে করোনা রোগী ভর্তির হার বেশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু ঈদের পর রোগী আসার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি। এখন প্রতিদিন আমাদের হাসপাতালে ৭৫ থেকে ১০০ জন করোনা রোগী আসছেন। আমরা যখন মে মাসে করোনা রোগী ভর্তি শুরু করি, তখন গড়ে ৭০০ জনের বেশি করোনা রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতেন। এই আগস্ট মাসে এসেও দেখতে পাচ্ছি, এখন আবার ৭০০ জনের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে করোনার চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগজনক।’বিজ্ঞাপন
করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ঢামেক ও বিএসএমএমইউয়ের দুই পরিচালক মনে করেন, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে করোনার সংক্রমণ কমছে না। তরুণদের বড় একটা অংশ করোনায় সংক্রমিত হলেও তাঁদের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তাঁরা নীরবে করোনা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন।
ঢামেকের পরিচালক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানছি না। তরুণদের কিন্তু করোনার উপসর্গ থাকছে না। যার ফলে তারা মনে করছে, কোনো সমস্যা নেই। তারা ঘরের বাইরে যাচ্ছে। তারা কিন্তু ক্যারিয়ার। তরুণদের অনেক দায়িত্ব। তারা রোগটি বহন করে মা–বাবাকে আক্রান্ত করছে। তারা যেন মাস্কটা পরে। করোনার বড় ওষুধ কিন্তু প্রতিরোধ। ভ্যাকসিন আসার আগ পর্যন্ত আমাদের করোনা প্রতিরোধ করতে হবে। আমরা যদি সচেতন না হয়ে রোগটা ছড়াতে থাকি, তাহলে তো সমস্যা হবে। যে সমাজ যত বেশি স্বাস্থ্যবিধি ফলো করছে, তারা তত ভালো আছে।’