মানবিকতার দ্যূতিছড়ানো সাধক সুফি মিজানুর রহমান
মানবিকতার দ্যূতিছড়ানো সুফি সাধক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। ১৯৪৩ সালের ১২ মার্চ নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চনগ্রামে জন্ম হলে জীবনের সিংহভাগ সময় কাটিয়েছেন চট্টগ্রামে। কাজ করে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের মানুষের জন্য। অবদান রাখছেন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। বাবা আলহাজ সুফি মোহাম্মদ দায়েম উদ্দিন ছিলেন কৃষক। রোদবৃষ্টিতে ভিজে গ্রামের যে মাঠে সোনাঝরা ফসল ফলাতেন তিনি কাঞ্চণগ্রামের সেই সোঁদামাটিতে মানবতার সুবাস ছড়িয়ে জন্ম হয় এই সুফি সাধকের। মা মরহুমা রাহাতুন নেসা বেগম ছিলেন গৃহিণী।
চলতি বছর ৮৩ তে পা দিলেন দিলেন সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিজানুর রহমান নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কোটি মানুষের ভালোবাসা, কিছু বিশেষণ। কপালে এঁটেছেন সফলতার অজস্র তিলক। সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ২০২০ সালে পেয়েছেন একুশে পদক।
সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান পিএইচপি ফ্যামেলির চেয়ারম্যান; দেশ বরেণ্য শিল্পপতি; কোটি মানুষের আইডল; তারুণের পথপ্রদর্শক; সুফি সাধক-নানা শব্দে, নানান বিশেষণে বিশেষায়িত তিনি। এ যেন একই ক্যানভাসে আঁকা শত শিল্পীর তুলির আঁচড়।
শুধু সুফিজম কিংবা ব্যক্তি হিসেবেই নন তারুণ্যের কাছে সুফি মিজানুর রহমান আইডল। যাঁর কন্ঠ থেকে বেরিয়ে আসা প্রতিটি শব্দ ধারণ করেন, লালন করেন কোটি কোটি যুবক। তাঁরই দেখিয়ে দেওয়া পথে হাঁটতে পছন্দ করেন, থাকতে পছন্দ করেন; ভালোবাসেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম।
সুফি মিজানুর রহমানের বড় সস্তার মোহাম্মদ মহসিন বাবা সম্পর্কে নিজের অভিব্যক্তি জানাতে গিয়ে বলেন, দীর্ঘ জীবনে সুফি মিজানুর রহমানের চলার পথ কখনোই মসৃণ ছিলো না। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সঙ্গে তিনি লড়াই করেছেন; লড়াই করে শূন্য থেকে শিখরে পৌঁছেছেন বাবা। যে মানুষটি নীতির সঙ্গে, সততার সঙ্গে কখনও আপস করেন নি তাঁর নাম সুফি মিজানুর রহমান। চলতি পথে তীব্র তাপদাহে ক্লান্ত হয়েছেন। কিন্তু হেরে যাননি। দমে যাননি। যোগ করেন মোহাম্মদ মহসিন।
১৯৬৫ সালে তৎকালীন ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের চট্টগ্রামের লালদীঘি শাখায় জুনিয়র ক্লার্ক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের বৈদেশিক বিভাগের ব্যবস্থাপক হিসেবে কমরত ছিলেন।
সুফি মিজানুর রহমান একাত্তর পরবর্তী সময়ে যখন ব্যবসা শুরু করেন তখন তাঁর হাতে সম্বল ছিল মাত্র ১৪৮৩ টাকা। এতো অল্প পরিমাণের মূলধন নিয়ে ব্যবসা শুরু করা এই ব্যবসায়ি অর্ধশত বছরে ব্যবসায়ি হিসেবে শুধু নিজেকেই গড়েননি; গড়েছেন সন্তানদের। শিক্ষা ও জ্ঞানে সুফি মিজানের ৮ সন্তান আজ ঈর্ষণীয়। এরমধ্যে চার সন্তান বাংলাদেশে অনারারি কনসাল হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন বিভিন্ন দেশের হয়ে।
ছেলেদের মধ্যে চারজন অস্ট্রেলিয়া এবং বাকি তিনজন যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চশিক্ষা নিলেও তাঁরা কেউ বিদেশ থাকেননি। দেশের টানে, বাবা-মায়ের টানে, পরিবারের টানে ফিরেছেন চট্টগ্রামে। দেশে ফিরে বাবার গড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর হাল ধরেছেন। খুলেছেন সম্ভাবনার নতুন নতুন দুয়ার। তাঁদের সাথে যুক্ত হয়েছেন সুফি পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম।
ব্যবসায়ি হিসেবে সুফি মিজানের অর্ধশত বছরের পথচলায় কর্মসংস্থান প্রায় ১০ হাজার মানুষের। এই দশ হাজার মানুষের ওপর নির্ভর করে জীবন নির্বাহ করছেন লাখো পরিবার। তাঁর গড়া প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকা টার্নওভার করলেও মানবিকতা ও মনুষ্যত্বকে কখনোই ভুলে যাননি সুফি মিজান। দিনে দিনে ব্যবসায়িকভাবে তিনি যত বড় হয়েছেন ততই ব্যাপ্তি বেড়েছে তাঁর। ততই সমৃদ্ধ হয়েছেন মানবিকতার উজ্জ্বলতায়।
এমনটাই দাবি সুফি মিজানুর রহমানের আরেক সস্তান আমীর হোসেন সোহেলের। তিনি বলেন, বাবা প্রায়শ্চই বলেন, ‘শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হয় পাঁপড়ির মতো। শিক্ষা ও অভিজ্ঞতাকে তুমি যদি শুধুই তোমার মধ্যে বেঁধে রাখো-তোমার মতোই কোনো একদিন তারও মৃত্যু হবে। যদি বেঁচে থাকতে চাও তোমার সব অর্জন কোটি প্রাণে ছড়িয়ে দাও।’
বাবা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সুফি মিজানুর রহমানের অপর সস্তান আকতার পারভেজ হিরু বলেন, বাবার কাছ থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে বাবার কাছ থেকে আমি শিখেছি-এখনও শিখি।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে শিল্প-বাণিজ্যে ডালপালা ছাড়ানো শিল্পপতি সুফি মিজান লেখাপড়া শুরু করেন নারায়ণগঞ্জে। কাঞ্চন ভারত চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬১ সালে ম্যাট্রিক এবং সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন তিনি। পরবর্তীতে তোলারাম কলেজ থেকে বি.কম ডিগ্রি লাভ করে ব্যাংকিং বিষয়ে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন সুফি মিজান।
মিজানুর রহমান ব্যক্তিগত জীবনে তাহমিনা রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯৬৭ সালের ৪ জুলাই। এই দম্পতি সাত ছেলে এক মেয়ের জনক-জননী। স্ত্রী তাহমিনা রহমানকে মহীয়সী নারী বলেই সম্বোধন করতে পছন্দ করেন সুফি মিজান। দাম্পত্য জীবনের ৫৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও নানান অনুষ্ঠানে হাতে হাত রচপে হাজির হন এই দম্পতি। সঙ্গে সঙ্গে থাকেন সব সময়।
বাবা-মায়ের প্রতি দায়বদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে তারুণ্যের আইডল সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ততার কারণে সম্পর্কগুলো আলগা হতে শুরু করে। পারিবারিক সম্পর্কগুলো শক্ত করে আঁকড়ে ধরতে হবে।
Do Follow: greenbanglaonline24