• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    এয়ারলাইন্সের টিকিট বিক্রির নতুন নিয়মে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা

    কানাডার টরন্টোর বাসিন্দা রুম্মান বিন ওয়ালি তিন মাস আগে দেশে আসেন। দেশে আসার আগে তিনি একটি ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট বুক করেন। কিন্তু বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় হঠাৎ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বলেছে যে তিনি বুকিং দিলেও তিন দিনের মধ্যে টিকিট কিনতে হবে। পরে, তিনি কানাডার একটি ট্রাভেল এজেন্সির সাথে বুকিং দিয়েএবং কম দামে টিকিট কিনে ফেলেন। তবে আগের নিয়ম বহাল থাকলে টিকিট কেনার টাকা দেশেই থাকত। রুম্মানের মতো হাজারো যাত্রীর এমন অবস্থা। এতে লাভবান হচ্ছে দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্স ও ট্রাভেল এজেন্সিগুলো। আর দেশটির এজেন্সিগুলো রাস্তায় নামতে চলেছে।

    এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিযোগ, প্রতিদিনই টিকিটের চাহিদা বাড়ছে। ডলার সংকটে দেশের ব্যাংকগুলোতে টিকিট বিক্রির দুই হাজার কোটি টাকারও বেশি টাকা আটকে আছে। এই টাকার ‘কস্ট অব ফান্ড’ সমন্বয় করে টিকিটের দাম বাড়িয়েছে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো। এমনকি দেশে টিকিট বিক্রির টাকা আদায় করতে না পারায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ৪৫টি ফ্লাইট কমিয়েছে এয়ারলাইন্সগুলো।

    মন্ত্রণালয় ও বিমান মালিকদের সংগঠন ‘বোর্ড অব এয়ারলাইন রিপ্রেজেন্টেটিভস বাংলাদেশ’ (বার) একাধিক বৈঠক করেও প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি সমাধান করতে পারেনি। গ্রুপ টিকিটের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সার্কুলার বাতিল বা সংশোধনের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে ‘বার’। চিঠিতে বলা হয়েছে, এ ধরনের সার্কুলার আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল আইনের পরিপন্থী। এয়ারলাইন্সের স্বাভাবিক বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন সেক্টরে এমন কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত নয়। কারণ, এতে বিমান পরিবহন সেবার অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব নষ্ট হবে। এতে বাংলাদেশের ভ্রমণ বাজার ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

    জানতে চাইলে বিমান বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, বড় এয়ারলাইন্সগুলো সাধারণত গ্রুপ বুকিংয়ের মাধ্যমে কারসাজি করে না। এগুলো মূলত ছোট এয়ারলাইন্সগুলো করে থাকে। তারা দীর্ঘদিন ধরে গ্রুপ বুকিংয়ের মাধ্যমে চড়া দামে টিকিট বিক্রি করে আসছে। কিছু অসাধু ট্রাভেল এজেন্সি তাদের অনৈতিক কাজের সুযোগ নেয়। বাজারে চাহিদা বেশি থাকার সুযোগ নিয়ে তারা কয়েকগুণ বেশি দামে টিকিট বিক্রি করে।

    এর আগে, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বিমান ভ্রমণের জন্য বিমান টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়েছে, এখন থেকে কোনো এয়ারলাইন তিন দিন বা ৭২ ঘণ্টার বেশি কোনো বিমান টিকিট বুক করতে পারবে না। বুক করা টিকিট তিন দিনের মধ্যে যাত্রীর নামে জারি করতে হবে। আর টিকিট বুকিংয়ে সংশ্লিষ্ট যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর ও পাসপোর্টের ফটোকপি দিয়ে বুকিং সম্পন্ন করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে টিকিট না নিলে বুক করা টিকিট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। টিকিটের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঠেকাতে এয়ারলাইন কোম্পানিগুলোকে ১০টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

    তবে এই বিজ্ঞপ্তিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যাত্রী ও দেশের ট্রাভেল এজেন্সিগুলো। টিকিট সিন্ডিকেট ভাঙতে উল্টো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কয়েক বছর ধরে টিকিট সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যাত্রীরা তাদের কাছে অসহায়। এমনকি গত ১৬ বছর ধরে টিকিট কারচুপির সঙ্গে রাজনৈতিক সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে। অভ্যন্তরীণ রুটের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রুটে বিমান ভাড়া আকাশচুম্বী হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার টিকিটের দাম কমিয়ে দেবে বলে আশা করেছিলেন যাত্রীরা। মন্ত্রণালয় এবং এয়ারলাইনও এ বিষয়ে অপ্রস্তুতভাবে কাজ করেছে। কিভাবে টিকিট সিন্ডিকেট ভাঙা যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছিল। এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষ ট্রাভেল এজেন্সি মালিকদের সঙ্গেও বৈঠক করেছে। কিন্তু হঠাৎ করেই প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রণালয়। এতে যাত্রীদের সুবিধা হবে বলে জানালেও উল্টোটা হয়েছে বলে মনে করেন বিমান চলাচল বিশ্লেষকরা। তবে ট্রাভেল এজেন্সি মালিকদের দাবি, বিজ্ঞপ্তির ফলে বিদেশি এজেন্সিগুলো বেশি মুনাফা পাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাভেল এজেন্সির মালিক বলেন, প্রজ্ঞাপন জারির আগে মন্ত্রণালয় কোনো আলোচনা করেনি। আমরা কখনই সিন্ডিকেট গড়ে তুলি না। কারা সিন্ডিকেট তৈরি করছে এবং কারা সুবিধা নিচ্ছে তা খুঁজে বের করতে হবে। বিজ্ঞপ্তির ফলে বিদেশি সংস্থাগুলো বেশি লাভবান হচ্ছে। এর পাশাপাশি এয়ারলাইন্সগুলোও লাভবান হচ্ছে।

    Do Follow: greenbanglaonline24