তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রস্তুত চীন

ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, চীন এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রস্তুত। তবে বাংলাদেশকে এ বিষয়ে স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

মঙ্গলবার ঢাকায় চীনা দূতাবাসে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক বিষয়ক এক ​​সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, “টেস্টা আপনার এলাকার একটি নদী, আপনার নিজের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে, এই প্রকল্পটি দ্রুত শুরু হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে।”

ইয়াও ওয়েন বলেন, “২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকার তিস্তা প্রকল্পের জন্য চীনের সহায়তা চেয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। প্রকল্পটি মূল্যায়ন করার পর, চীন ২০২৩ সালে বাংলাদেশ সরকারকে রিপোর্ট করে যে তাদের দেওয়া প্রকল্পটি সংশোধন করা উচিত কারণ প্রকল্পটিতে কিছু অপ্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে। কিন্তু তারপর থেকে, আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে কোনও সাড়া পাইনি।”

বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসার জন্য চীনের কুনমিং প্রদেশে তিনটি সেরা হাসপাতাল নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন যে, দুই দেশের সংশ্লিষ্ট পক্ষ চিকিৎসার ধরণ, ভিসা সুবিধা এবং দোভাষী নির্বাচন সহ সামগ্রিক প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, বেইজিং আশা করছে যে মার্চের শুরুতে বাংলাদেশি রোগীদের প্রথম দল চিকিৎসার জন্য কুনমিং ভ্রমণ করবে।

গত মাসে, পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বেইজিং সফর করেছিলেন। সেই সময়ে তিনি প্রথমে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছিলেন। চীন তাৎক্ষণিকভাবে ভারতের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশিদের চিকিৎসার প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। এক সংবাদ সম্মেলনে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন যে, চীন ঢাকায় একটি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য বাংলাদেশের কাছ থেকে একটি বিস্তারিত প্রস্তাবের অপেক্ষায় রয়েছে।

এছাড়াও, চীন তাদের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত অনুসারে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য বিশেষায়িত আধুনিক সরঞ্জাম সরবরাহ করবে। ঢাকার একটি হাসপাতালে স্থাপিত চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের জন্য ২০টি আধুনিক রোবট-নিয়ন্ত্রিত সরঞ্জাম আগামী মাসের শুরুতে ঢাকায় পৌঁছাবে।

দুই দেশের মধ্যে ভবিষ্যতের সহযোগিতা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, গত ৫০ বছর ধরে দুই দেশ অভিন্ন স্বার্থে একে অপরের সাথে সহযোগিতা করে আসছে। চীন সবসময় বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, চীনের নীতি হলো পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সমতা এবং স্বার্থকে মাথায় রেখে এই দেশের সকল মানুষের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা।

দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের এই ভিত্তি কখনও পরিবর্তিত হবে না বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় ঐক্য রক্ষায় সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন যে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তার প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরের জন্য চীনকে বেছে নিয়েছেন। এটি দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক এবং সহযোগিতার একটি স্পষ্ট বার্তা। একই সাথে, এটি দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা এবং বন্ধুত্বকে সুসংহত ও গভীর করার একটি অতিরিক্ত সুযোগ। চীন ও বাংলাদেশকে ভালো প্রতিবেশী এবং নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করে টুন্নি বলেন যে, বিশ্ব রাজনীতির পরিবর্তন বা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির দ্বারা এই সম্পর্ক প্রভাবিত হবে না। বরং, এটি সর্বদা দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে।

৫ আগস্ট ছাত্র ও জনতার রক্তাক্ত বিদ্রোহে হাসিনার স্বৈরশাসনের পতনের পর থেকে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে নতুন মেরুকরণ দেখা দিয়েছে। এর কি আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার উপর কোনও প্রভাব পড়বে? জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন কৌশলী উত্তর দেন। তিনি বলেন, প্রশ্নটি চীনের কাছে নয়, ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের কাছে করা উচিত। তবে তিনি আশা করেন যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যা সমাধান করা উচিত।

ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে উত্তেজনা কমাতে চীন মধ্যস্থতা করবে কিনা জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমি মনে করি বাংলাদেশিরা তাদের নিজস্ব সমস্যা সমাধানের জন্য যথেষ্ট বিচক্ষণ।”

এক প্রশ্নের জবাবে ইয়াও ওয়েন বলেন, সংস্কার ও নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। চীন এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করবে না। তিনি আরও বলেন যে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এই দেশের সকল রাজনৈতিক দলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়।

রাষ্ট্রদূত বলেন যে চীন দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক কর্মসূচির বিনিময়ে বাংলাদেশে একটি চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং চীনে একটি বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছে।

তিনি উল্লেখ করেন যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ও চীনের একই অবস্থান রয়েছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তক এবং ওয়েবসাইটে চীন-অরুণাচল সীমান্তের ভুল মানচিত্রের প্রতি বেইজিংয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশ সরকারকেও জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রদূত আশা করেন যে বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলি চীনের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাবে।

Do follow: greenbanglaonline24