• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ১৩ বছরেও সমাধান হয়নি খুনের রহস্য

    সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার ১৩তম বার্ষিকী আজ। দেশজুড়ে আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্ত দীর্ঘ সময় পার হলেও শেষ হয়নি। এ পর্যন্ত ৬ বার বদল হয়েছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা; তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় পেছানো হয়েছে ১১৫ বার। গত বছর তদন্ত সংস্থাও পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়নি। গ্রিল কাটা চোরের বিষয়টি মাথায় রেখে তদন্ত এখনো এগিয়ে চলছে। হত্যার পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখছে হাইকোর্ট ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কর্তৃপক্ষের গঠিত টাস্কফোর্স।

    সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে গত বছর হাইকোর্ট মামলার তদন্ত র্যাব থেকে পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করে। এ ছাড়া একটি উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্সও গঠন করা হয়েছে।

    টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ও পিবিআই প্রধান মোস্তফা কামাল বলেন, “সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে আমরা বহুমুখী তদন্ত চালাচ্ছি। ইতিমধ্যে ৩৫ জনকে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। অনেকের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলছি। তথ্য পেলেই আমরা যতটা সম্ভব তদন্ত করছি।”

    এদিকে গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন রুনির ভাই নওশের রোমান। তিনি রোববার বলেন, “দেশে ক্ষমতার পালাবদলের পর যে নতুন তদন্ত শুরু হয়েছে, তাতে আমি আশাবাদী। তদন্তকারীরা আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। তদন্তে তাদের আন্তরিকতা দেখতে পাচ্ছি।”

    সাংবাদিক দম্পতি হত্যার রহস্য উদঘাটনে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান (সাবেক র্যাব কর্মকর্তা), ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের সাবেক উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে; অন্তত এক ডজন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। কারাবন্দি র্যাবের সাবেক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহেলকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ছাড়া চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের পর গণমাধ্যমে যেসব প্রতিবেদন এসেছে তার বেশির ভাগই তদন্ত করছে পিবিআই।

    ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি। হত্যাকাণ্ডের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে জানা যায়, ঘটনাটি গ্রিল চোর ঘটিয়েছে। এছাড়া ৪ গ্রিল চোরকে আটক করেছে তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মামলার ফাইলে ওই চার চোর যুক্ত হয়নি। পিবিআই প্রাথমিক তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ ছাড়া র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তের ধারাবাহিকতায় গ্রিল চোর সাগর ও রুনি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বেসরকারি জ্বালানি সংস্থা সামিটের রিপোর্টের কারণে এই দম্পতিকে খুন করা হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্য কোনো কারণে এ ঘটনা ঘটেছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

    সংবাদ প্রতিবেদন তৈরিতে চুরি-ডাকাতি, পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহ, পেশাগত দ্বন্দ্ব, অতীত শত্রুতা, দেনা-পাওনা, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রাখা, প্রেমের সম্পর্ক এবং সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিসহ সম্ভাব্য সব দিক তদন্ত করছে পিবিআই। এছাড়া ২০১২ সালে গ্রেপ্তার হওয়া চার গ্রিল চোরকেও খুঁজছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। চারজনের নাম জানা গেলেও তাদের পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। ফলে তদন্তকারীরা নানাভাবে তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।

    গত বছরের ২৩ অক্টোবর সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তে চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। টাস্কফোর্সকে ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব র্যাবের কাছে হস্তান্তর করে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্সকে তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

    হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ঘটনার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের আবেদন করেন তিনি। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের নিজ বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন সাগর ও রুনি। সাগর মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক এবং রুনি এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার ছিলেন। এ ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন। থানার পর মামলাটি তদন্ত করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে, ১৮ এপ্রিল, ২০১২ ডিবি ব্যর্থতার কথা স্বীকার করলে হাইকোর্ট র্যাবকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন।

    Do Follow: greenbanglaonline24