• বাংলা
  • English
  • রাজনীতি

    বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সমর্থন করে না বিএনপি

    ছাত্র বিদ্রোহ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনলাইন বক্তব্যের কারণে দেশজুড়ে ফ্যাসিবাদী স্থাপনায় হামলাসহ চলমান অরাজক পরিস্থিতিকে বিএনপি সমর্থন করছে না। দলটি বিশ্বাস করে যে চলমান পরিস্থিতি একটি ষড়যন্ত্রের অংশ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এটি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সরকার সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হবে। এছাড়াও, গণঅভ্যুত্থানের মূল চেতনা, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ব্যাহত হবে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি আগামী সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে দেখা করে তাদের উদ্বেগ, অবস্থান এবং করণীয় সম্পর্কে মতামত জানাবে।

    বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে বলা হয়েছে যে, পতনশীল শেখ হাসিনা সরকার এবং আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্কিত ফ্যাসিবাদী স্থাপনায় হামলার জন্য বিএনপি সরাসরি কাউকে দোষারোপ করবে না বা প্রতিবাদে কোনও কর্মসূচি পালন করবে না। একই সাথে, দলের সর্বত্র সতর্কীকরণ দেওয়া হয়েছে যাতে দলীয় নেতাকর্মীরা এই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত না হন। এছাড়াও, দলটি বিভিন্ন সভা ও সেমিনারের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাবে যে বিএনপি চলমান বিশৃঙ্খলাকে সমর্থন করে না।

    গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল ভাষণের প্রতিবাদে বুধবার রাজধানীর ৩২ নম্বর বাড়িসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি একটি বিবৃতি জারি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দেশের পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে। দলটি বলেছে যে, নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত হলে দেশে নৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়বে। দলটি বিবৃতিতে বলেছে যে, কঠোর আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা এবং রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা দৃশ্যমান করা এখন সময়ের দাবি। এই পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি জোরালো বার্তা দিয়েছে।

    এই বিষয়ে বিভিন্ন গুজবের কারণে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কিছু নেতা তাদের স্থান পরিবর্তন করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১১:৩০ মিনিটে শুরু হওয়া এই সভা দুপুর ১:১৫ পর্যন্ত চলে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগদান করেন। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চলমান পরিস্থিতি সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন নেতারা।

    বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ চন্দ্র রায় বলেন, জরুরি নির্বাচনমুখী সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্ব। তবে, জনসাধারণের ইচ্ছা উপেক্ষা করে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেই এই অগ্রাধিকারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরিবর্তে অন্যান্য বিষয়ের উপর বেশি মনোযোগ দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এটি গণঅভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্যকে চ্যালেঞ্জ করবে। তাই সরকারের উচিত শীঘ্রই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা।

    সভা সূত্রে জানা গেছে, সভায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন এবং সমসাময়িক রাজনীতিসহ সারা দেশে ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিএনপি দেশব্যাপী ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার ষড়যন্ত্র এবং ফাঁদ হিসেবে বিবেচনা করে। তাই, দলটি তার নেতাকর্মীদের যেকোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা ও সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত না হওয়ার জন্য জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলকে ইতিমধ্যেই এই ধরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে দলের নেতাকর্মীরা যেন কোনও বিরোধী দলের বাড়িতে আগুন লাগানো, ম্যুরাল ভাঙচুর সহ কোনও সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত না হন। বিএনপি আশা করে যে, দেশ ও দলের বৃহত্তর স্বার্থে দলের প্রতিটি নেতাকর্মী এই নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন।

    বিএনপি নেতারা মনে করেন যে, গণঅভ্যুত্থানের এতদিন পর সারা দেশে এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির পেছনে বিএনপি এবং নির্বাচনকে টার্গেট করা হচ্ছে। ছাত্ররা একটি রাজনৈতিক দলের প্রভাবে তাদের শক্তি প্রদর্শন করছে। উদ্দেশ্য হলো নির্বাচন বিলম্বিত করা যাতে রোডম্যাপ শীঘ্রই ঘোষণা না করা হয়। কারণ, ছাত্ররা নতুন দল গঠন এবং সারা দেশে সংগঠনকে সুসংহত করার জন্য পর্যাপ্ত সময় চায়। অন্যদিকে, বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দেশি-বিদেশি চাপও বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি বিশ্বাস করে যে নির্বাচন বিলম্বিত করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেশজুড়ে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে।

    সভায় বিএনপির একজন নেতা বলেন, দেশে বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থানের পরপরই বিভিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু এত দিন পরেও কেন হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটছে? দেশ কি স্থিতিশীল হবে না?

    Do Follow: greenbanglaonline24