তাপসের একতরফা সিদ্ধান্তে ভুগছেন দক্ষিণ ঢাকাবাসী
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের একতরফা সিদ্ধান্তে দুর্ভোগে পড়েছেন ৮০ হাজার নাগরিক। দেশের ১১টি সিটি কর্পোরেশন, সব পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ প্রদান করে। ডিএসসিসি তার নিজস্ব সার্ভারের মাধ্যমে প্রদান করে। ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি থেকে প্রাপ্ত জন্ম সনদ দিয়ে পাসপোর্ট করা যাচ্ছে না। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রেও দক্ষিণের সনদ চলে না। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৮০,০০০ নাগরিক এই সনদ নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
শুরু থেকেই ডিএসসিসির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন অফিস। সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম একাধিক উদ্যোগ নিয়েও এ সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। তাপস তার সিদ্ধান্তে অটল। ঢাকা দক্ষিণে জন্ম ও মৃত্যু সনদ সংক্রান্ত যাবতীয় অর্থ ডিএসসিসির তহবিলে জমা দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। অর্থমন্ত্রণালয় তা গোলমাল করেছে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকে একই পদ্ধতিতে সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাপস অসন্তুষ্ট ছিলেন। এ কারণে তিন মাস ধরে ঢাকা দক্ষিণে জন্ম ও মৃত্যু সনদ নিবন্ধন ও বিতরণ বন্ধ ছিল। নিজস্ব সার্ভার তৈরি করার পর, দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষ ৪ অক্টোবর, ২০২৩ থেকে সার্টিফিকেট বিতরণ শুরু করে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি থেকে সন্তানের জন্ম সনদ নিয়ে চরম সমস্যার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরেছেন শারমিন সুলতানা রত্না নামের এক ব্যক্তি। তিনি সমস্যার বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন, ‘আমি একটি সমস্যায় পড়েছি, আপনি বলতে পারেন যে আমি এটিকে অবহেলা করে সমস্যা তৈরি করেছি। বিরক্ত না করে সমাধান দিন। আমি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করেছি, যা কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান গ্রহণ করে না। শিশুকে প্রি-ওয়ানে ভর্তির জন্য আবেদন করতে হবে। এখন কাউন্সিলর না থাকায় আমি আর আবেদন করতে পারছি না।
রত্না একা নন, এমন প্রায় ৮০ হাজার সার্টিফিকেট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দারা। অনেকেই পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ফিরে এসেছেন। তাপসের একতরফা সিদ্ধান্তে ভুগতে হচ্ছে তাদের।
সরকার পরিবর্তনের পর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নাগরিকরাও ১৫ আগস্ট থেকে জাতীয় সার্ভারের মাধ্যমে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন করছেন। এরপর থেকে যারা নিয়েছেন তাদের কোনো সমস্যা হয়নি। এটি জাতীয় সার্ভারে নতুন যুক্ত হওয়ার পরে ১৫ আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরে প্রায় ২৩,০০০ জন্ম নিবন্ধিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
ডিএসসিসির মোট ওয়ার্ড রয়েছে ৭৫টি। এসব ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মধ্যে যারা ডিএসসিসির সার্ভার থেকে জন্ম-মৃত্যু সনদ নিয়েছেন তারা তা ব্যবহার করতে পারছেন না।
স্বতন্ত্র সার্ভারের মাধ্যমে নিবন্ধন সেবা চালুর পর ১৫ আগস্ট থেকে জাতীয় সার্ভারের মাধ্যমে আবারও কাজ চলছে। ডিএসসিসি http://naftrong.fongpop.mra.nof এই সার্ভারের মাধ্যমে নিবন্ধন করত। অন্যদিকে, সারাদেশে নিবন্ধিত সার্ভারটি হল http://naftrong.mra.naf।