• বাংলা
  • English
  • অর্থনীতি

    ঋণ নিয়ে ৩৩ হাজার কোটি  টাকা পাচার

    বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানি সাতটি ব্যাংক থেকে ৩৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পণ্য রপ্তানির আড়ালে পাচার করেছে। সংগঠনটির নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। সালমান এফ রহমানের ছেলে সায়াম ফজলুর রহমানের নামে চোরাচালানের টাকায় সৌদি আরবের দাম্মামে একটি ওষুধ কোম্পানি, বিপুল বিনিয়োগ ও দুবাই, সিঙ্গাপুর ও ইংল্যান্ডে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন। এর মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের ১৮টি কোম্পানির মাধ্যমে ১৩৫ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৬১৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকার বেশি) বিভিন্ন দেশে পাচারের প্রমাণ পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

    এদিকে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদ ও হাসান তাহের ইমাম ও তাদের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে সিআইডির আর্থিক অপরাধ ইউনিট। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান জানান, বেক্সিমকো গ্রুপ ও এর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া চৌধুরী নাফিজ সরাফাতসহ তার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে তদন্ত শুরু করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

    সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ বছরে সাতটি ব্যাংক থেকে জালিয়াতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পণ্য তৈরি করেছে বেক্সিমকো গ্রুপ। এসব পণ্য বিদেশে রপ্তানি হলেও বিপুল পরিমাণ বিক্রি দেশে ফেরেনি। তারা পণ্য বিক্রির টাকা বিদেশে পাচার করেছে। এদের মধ্যে সালমান এফ রহমানের ছেলে সায়াম ফজলুর রহমান সৌদি আরবের দাম্মামে একটি ওষুধ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। দাম্মাম ভিত্তিক বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের বেশির ভাগ অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ওভার ইনভয়েসিং, আন্ডার ইনভয়েসিং এবং হুন্ডির মাধ্যমে। ওষুধ কোম্পানি ছাড়াও সায়াম রহমান দুবাই, সিঙ্গাপুর ও ইংল্যান্ডে বিপুল বিনিয়োগ করে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন।

    বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যাংক ঋণ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সাতটি ব্যাংক থেকে ৩৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নেওয়া হয়েছে। জনতা ব্যাংক থেকে ২১ হাজার ৬৮১ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ৫ হাজার ২১৮ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ২৯৫ কোটি, সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক থেকে ৫ হাজার ৬৭১ কোটি এবং এবি ব্যাংক থেকে ৬০৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে জালিয়াতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে বাজার থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে বেক্সিমকো গ্রুপ।

    সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, বেক্সিমকো গ্রুপ ব্যাংক ঋণ নিয়ে পণ্য রপ্তানির বিপরীতে ১৮টি কোম্পানির মাধ্যমে ১৩৫ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। এসব কোম্পানির তৈরি পণ্য পাঠানো হলেও বিক্রির টাকা দেশে ফেরত আসেনি।

    পণ্য রপ্তানির পর দেশে টাকা না ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে আবু সফিউল্লাহ বলেন, করোনার সময়ে মাস্কসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। করোনা চলে গেলে এসব পণ্য রপ্তানির টাকা আটকে যায়। পরে কিছু টাকা আসে। তবে যারা প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন দেখেন তারাই ভালো বলতে পারবেন। মানি লন্ডারিং নিয়ে কিছু বলতে পারব না।

    এদিকে আশা চৌধুরী নাফিজ সরাফাতসহ আর্থিক খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি নাফিজ সরাফাত ও তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদ ও হাসান তাহের ইমামের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি, জালিয়াতি, ওভার ইনভয়েস, আন্ডার ইনভয়েস ও সংগঠিত অপরাধের মাধ্যমে হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে।