জাতীয়

আন্দোলনে অচল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

সারাদেশে স্বাস্থ্যখাতকে সচল রাখার মূল কাজ রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন, ডাক্তার নিয়োগ, বদলি থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সেবা সবকিছুই এখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তারা কাজে আসছেন না। বিগত সরকার সমর্থক কর্মকর্তাদের দ্বারা বিভিন্ন সময়ে বঞ্চিত হওয়া লোকজন শীর্ষ কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করছে। নবনিযুক্ত মহাপরিচালককেও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সমালোচনার মুখে ইতোমধ্যে কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে অপসারণ করা হলেও পতিত সরকারের সময় মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

গত বুধবার দুপুর ১২টা থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রবেশমুখে আন্দোলন চলছিল। মহাপরিচালক, দুই অতিরিক্ত মহাপরিচালক, মহাপরিচালক (প্রশাসন), হাসপাতাল ও ক্লিনিকের পরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরের কাউকে পাওয়া যায়নি। নিম্নস্তরের কর্মকর্তা ও অফিস সহকারীরা অবসর সময় কাটাচ্ছেন।

আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আসছেন না : হাসিনা সরকারের পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট আওয়ামী সমর্থকরা একদলীয় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ডাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মিছিল ও সমাবেশ করে। ছাত্রদের যেখানে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

আওয়ামী লীগের পতনের পর বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ১৫ আগস্ট থেকে এসব শীর্ষ কর্মকর্তার অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। আবারও বদলি হয়ে গেলেও তাদের অনেকেই কর্মকর্তাদের পদে যোগ দিতে পারেননি। স্থানান্তরিত প্রতিষ্ঠানের।

তাদের একজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট বিভাগের লাইন ডিরেক্টর ডা. নাজমুল ইসলাম। তিনি কাজে ফেরেননি বলে জানা গেছে। গত শুক্রবার ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। আরেক আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান। গত বুধবার তিনি অফিসিয়াল ডিউটিতে ছিলেন।

দেশের সব অংশে স্বাস্থ্যসেবা চালু রাখার জন্য অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত বেশিরভাগ পদক্ষেপগুলি মধ্য-স্তরের কর্মকর্তারা সংগঠিত করেন। তাদের একজন হাসপাতাল শাখার কর্মকর্তা মেহেদী হাসান তমাল। তিনি গত মঙ্গলবার ফোনে আমাদের বলেন, “যেখানে মহাপরিচালক থেকে ঊর্ধ্বতন কেউ প্রবেশ করতে পারে না সেখানে আমরা ছোট কর্মকর্তারা কীভাবে ঝুঁকি নেব?” পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছি।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার চার দিন পর কাজে ফিরে আসা একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “শুধু চিকিৎসকরা আন্দোলন করলে সমস্যা ছিল না।” কিন্তু অধীনস্থরাও তাই করছে। তাদের লাঞ্ছিত ও হয়রানির ভয়ে আমি অফিসে আসিনি। যেখানে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে হয়রানি করা হয়েছে সেখানে আমরা কিছুই না।

নতুন মহাপরিচালক এখনো বসতে পারেননি : সরকার পরিবর্তনের পরপরই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পদবঞ্চিত মেডিকেল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পদে পদে বসছেন। তারা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছেন। সে অনুযায়ী মহাপরিচালকের পদ থেকে অধ্যাপক ড. খুরশীদ আলমকে সরিয়ে নতুন মহাপরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অধ্যাপক ড. রোবেদ আমিনকে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের তোষামোদ করায় আন্দোলনকারীরা তাকে সরাতে চায়।

ফলে ১৮ আগস্ট মহাপরিচালকের দায়িত্ব পেলেও চেয়ারে বসতে পারেননি রোবেদ আমিন। স্বরাষ্ট্র থেকে মন্ত্রণালয়ে যাতায়াত করেন।

তবে গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে গেলে স্বাস্থ্য সচিব তাকে অধিদপ্তরে যাওয়ার কড়া নির্দেশ দেন। মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে অনেককে মন্ত্রণালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তিনি পদত্যাগ করতে পারেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে।