বিবিধ

কপিরাইট সনদ পেল গফুর হালীর ৩০০ গান

“দিল বড় জ্বালারে পাঞ্জাবিওয়ালা, মনের বাগানে ফুটিল ফুল রে কিংবা ‘সোনাবন্ধু তুই আমারে করলিরে দিওয়ানা” গানের অমর স্রষ্টা আবদুল গফুর হালী। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক, মাইজভাণ্ডারী ও মরমী গানের কিংবদন্তীতুল্য এই গীতিকার, সুরকার ৬০ বছরের সংগীত-জীবনে প্রায় দুই হাজার গান লিখেছেন। তার গান নিয়ে বিশ্বের নানা দেশে হয়েছে মূল্যবান গবেষণা। সেই আবদুল গফুর হালীর প্রতিভার মূল্যায়ন এবং তার সংগীতের প্রচার-প্রচারে পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমানের রয়েছে অবিস্মরণীয় অবদান। গফুর হালীর গান সংরক্ষণে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আবদুল গফুর হালী রিসার্চ সেন্টার, এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সুফি মিজান। সুফি মিজান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবং পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক আনোয়ারুল হক চৌধুরীর পৃষ্ঠিপোষকতায় আবদুল গফুর হালীর ৩০০ গানের স্বরলিপিসহ তিনটি গীতিকাব্য “সুরের বন্ধন, শিকড়, দিওয়ানে মাইজভাণ্ডারী ও চাটগাঁইয়া নাটকসমগ্র” প্রকাশিত হয়েছে।

অবশেষে পিএইচপি ফ্যামিলির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিনের আন্তরিক উদ্যোগে চট্টগ্রামের প্রথম শিল্পী হিসাবে কপিরাইট সনদ পেল কালজয়ী সংগীতজ্ঞ আবদুল গফুর হালীর ৩০০ গান। আজ রোববার দুপুরে ঢাকার জাতীয় গ্রন্থাগারস্থ কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী আবদুল গফুর হালী রিসার্চ সেন্টারের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন ও রিসার্চ সেন্টারের সেক্রেটারি, সাংবাদিক নাসির উদ্দিন হায়দারের হাতে আবদুল গফুর হালীর ৩০০ লোকগান এবং ছয়টি আঞ্চলিক নাটকের কপিরাইট সনদ হস্তান্তর করেন।

কপিরাইট অফিসের রেজ্রিস্টার জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, আবদুল গফুর হালী হলেন চাটগাঁইয়া গানের প্রধানতম রূপকার। তার গান বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্ব পরিসরে সমাদৃত হয়েছে। অনন্য প্রতিভাধর এই সংগীতজ্ঞের অমর গানগুলো সংরক্ষণে পিএইচপি ফ্যামিলি তথা আবদুল গফুর হালী রিসার্চ সেন্টারের পক্ষে মোহাম্মদ মহসিন ও আনোয়ারুল হক চৌধুরী যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। গফুর হালীর মতো কালজয়ী শিল্পীর গান ও নাটকের কপিরাইট সনদ দিতে পেরে আমরা আনন্দিত।

গফুর হালীর কালজয়ী সৃষ্টিগুলোর কপিরাইট পাওয়া প্রসঙ্গে আবদুল গফুর হালী রিসার্চ সেন্টারের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোহসিন বলেন, চট্টগ্রামের কোনো শিল্পীর সৃষ্টি এই প্রথম কপিরাইট সনদ পেল-যা আমাদের জন্য গর্বের।চট্টগ্রামের হাজার বছরের সংগীতের ইতিহাস গফুর হালীর সৃষ্টি অনবদ্য জানিয়ে তিনি আরও বলেন, গফুর হালীর শিল্প ও সৃষ্টিকর্ম সংরক্ষণের উদ্যোগের সাথে জড়িত থাকতে পেরে আমরা পিএইচপি পরিবার গর্ববোধ করছি।

আবদুল গফুর হালী রিসার্চ সেন্টারের সেক্রেটারি, লোকসংগীত গবেষক ও সাংবাদিক নাসির উদ্দিন হায়দার বলেন,আবদুল গফুর হালী চাটগাঁইয়া লোকসংস্কৃতির এক প্রবাদ পুরুষ। গত ছয় দশক ধরে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক, মরমী ও মাইজভাণ্ডারী গানে তার অবদান অবিস্মরণীয়। গফুর হালী চাটগাঁইয়া গানের প্রধান দুই ধারা আঞ্চলিক ও মাইজভাণ্ডারী গানে নবযুগের স্রষ্টা। তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নাটকের পথিকৃৎ রচয়িতা এবং সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামেরই নিজস্ব সংগীত-ধারা হিসাবে পরিচিতি পাওয়া “মোহছেন আউলিয়ার গানের  প্রবর্তক।চট্টগ্রামের প্রথম কোন সংগীতজ্ঞ হিসাবে  আবদুল গফুর হালীর গান ও নাটক কপিরাইট স্বীকৃতি পেল-এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।

প্রসঙ্গত, আবদুল গফুর হালীর ৭৬টি মাইজভাণ্ডারী গান জার্মান ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আবদুল গফুর হালীর গান ও জীবন নিয়ে জার্মানির হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. হান্স হার্ডার প্রকাশ করেছেন গবেষণা গ্রন্থ “ডার ফেরুখটে গফুর স্প্রিখট” (পাগলা গফুর বলে)।  গফুর হালীর গান নিয়ে গবেষণা করেছেন বিশ্বখ্যাত নৃবিজ্ঞানী পিটার বার্টুসি ও আমেরিকার সংগীত গবেষক ড. বেঞ্জামিন ক্রাকাউর।

২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর পরলোক গমন করেন আবদুল গফুর হালী।

মন্তব্য করুন