শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জোর প্রস্তুতি
বিশেষজ্ঞরা একসাথে না খুলে ধাপে ধাপে খোলার পরামর্শ দেন, বড় প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যবিধি নিয়ম অনুসরণ করতে উদ্বিগ্ন
প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের দেশের সাড়ে পাঁচ কোটি শিক্ষার্থী টানা ১১ মাস ধরে ঘরবন্দী রয়েছেন। করোনার ভ্যাকসিনের আগমনের সাথে সাথে অবশেষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। শুক্রবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানগুলির প্রধানরা নড়েচড়ে বসেছেন।
শনিবার থেকে স্কুল-কলেজে পরিষ্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বন্ধ ক্লাসরুম, ধুলাবালি ব্ল্যাকবোর্ড এবং প্রতিষ্ঠানের উঠোন ধুয়ে ফেলা হচ্ছে। গৃহহীন শিক্ষার্থীরাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি খোলার প্রস্তুতির খবরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। তারা দ্রুত ক্লাসে ফিরে আসতে চায়।
তবে একসাথে নয়, বিশেষজ্ঞরা ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেছে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান একসাথে চালু হলে কোনওভাবেই স্বাস্থ্যবিধি নিয়ম মেনে চলা সম্ভব হবে না। এই কারণে, গ্রামীণ এবং করোনার জেলাগুলিতে, কম ক্ষতিগ্রস্থ স্কুল এবং কলেজগুলি প্রথমে চালু করা উচিত। তাদের মতে,ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ নগর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে একটু পরে খোলার যুক্তিসঙ্গত হবে।
এদিকে রাজধানীর বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। এখনই এটি চালু হলে রাজধানীর বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে না। কারণ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ২৮ থেকে ৩০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের একাধিক ক্যাম্পাস রয়েছে। সংস্থাটির পরিচালনা কমিটির বৈঠকে স্বাস্থ্য বিধি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও তারা এ বিষয়ে মুখ খুলতে চান না। অভিভাবকরাও চিন্তিত। জানা গেছে যে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির প্রায় ২৮০০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। বেইলি রোডের মূল ক্যাম্পাস ছাড়াও রাজধানীর ধানমন্ডি, আজিমপুর ও বসুন্ধরায় তাদের আরও তিনটি ক্যাম্পাস রয়েছে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের ৩০,০০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। কলেজ শাখাটি শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য। মতিঝিলে মূল ক্যাম্পাস ছাড়াও বনশ্রী ও মুগদাতে তাদের আরও দুটি শাখা ক্যাম্পাস রয়েছে। মিরপুরের মণিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩৫০০০ মণিপুরের প্রধান বালক ও বালিকা শাখা ছাড়াও রূপনগর, শেওড়াপাড়া এবং ইব্রাহিমপুরে তিনটি শাখা ক্যাম্পাস রয়েছে। ভর্তির চাপের কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের অনেককেই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে একাধিক বিভাগ থাকতে হয় এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিভাগে ক্লাস নিতে হয়। এখন এসব প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা কীভাবে সম্ভব হবে তা নিয়ে নিজেই উদ্বিগ্ন শিক্ষকরা।
মাউসির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোঃ গোলাম ফারুক শনিবার বলেন, শিক্ষার্থীদের ভিড় বা ভিড়ের মতো ক্লাস নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। আমরা বলেছি যে প্রতিটি বেঞ্চটি ৫ ফিট দূরত্বে বসাতে হবে। এবং সমস্ত ছাত্র একই দিনে ক্লাসে আসতে হবে না। আমরা শীঘ্রই আপনাকে জানাবো কে কোন শ্রেণিতে পড়বে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ঠিক কখন চালু হবে সে বিষয়ে তারা এখনও সরকারের কাছ থেকে কোন চূড়ান্ত নির্দেশনা পায়নি।
মাউসির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক -১) আমিনুল ইসলাম টুকু জানান, শুক্রবার নির্দেশ দেওয়ার পরে শনিবার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা বিদ্যালয়ে পরিষ্কার কার্যক্রম শুরু করেছেন।
মতিঝিল সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ হাফিজুল ইসলাম শনিবার জানান, দীর্ঘ-বন্ধ ক্লাসরুম পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়েছে। তিনি জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানের কলেজ শাখা পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। তিনি ভাবেন যে ২০ জনের বেশি কোনও শ্রেণিকক্ষে বসতে পারবেন না। ধানমন্ডি সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন জানান, পুরো স্কুল ক্যাম্পাসটি পরিষ্কার করা হচ্ছে। তারা শিক্ষার্থীরা আসার অপেক্ষায় আছে। রূপনগর সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুন নাহার চৌধুরী জানান, তিনি একটু আগে স্কুল পরিষ্কার করেন। শিক্ষার্থীরা আসছিল, ভর্তি হচ্ছিল, বই দিচ্ছি। এবার তিনি ক্লাসটি পুরোপুরি খোলার পরেই শুরু করতে পারবেন।
সংগঠনের কর্মচারীরা স্কুল এর জন্য সাফ উদ্যোগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। সরকারী পরীক্ষাগার বিদ্যালয়ের ক্লিনার নীল মনি কান্ত বিশ্বাস বলেন, “আমার ভালো লাগছে, স্কুলটি আবার পূর্ণ হবে।” শিক্ষকরাও। তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাজেদুল আলম বলেন, “আমরা আবার ক্লাসরুমে শিক্ষকতায় ফিরে যেতে পারব। ভাল লাগছে।”
খুশি অভিভাবকরাও। প্যারেন্টস ইউনিটি ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেছেন, আমরা স্বাস্থ্য বিধি মেনে স্কুল খোলার প্রস্তুতি নিয়ে খুশি।