• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    আতঙ্কে রাজস্ব বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা,শুধু মতিউর-ফয়সাল নন, উন্মোচিত আরও কয়েকজন

    দুই সরকারি কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়ার পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক ও কর বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যখন, কার বিপুল সম্পদের তথ্য গণমাধ্যমে আসে, যাদের দিকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধানী তীর ছুঁড়ে, তারা সত্যিই ভয় পায়। নিজেদের রক্ষা করার জন্য, তারা এখন কেবল কর্মক্ষেত্রেই নয়, সর্বত্র তারা সর্বদা খুব সতর্ক থাকে। যেকোনো ধরনের আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে আগে থেকেই নানা হিসাব-নিকাশ করা হয়। শুধু তাই নয়। শুধু অফিসিয়াল নয়, ব্যক্তিগত আলাপচারিতায়ও ব্যক্তিগত সেলফোনে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। নিজেদের বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার থেকেও বিরত থাকছেন তারা। তারা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে খুবই সংযত।

    এদিকে দুদক সূত্রে জানা গেছে, শুধু মতিউর ও ফয়সাল নয়, রাজস্ব বোর্ডের আয়কর ও শুল্ক বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তাদেরও সম্পদের হিসাব নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে এই দুর্নীতি দমন কমিশন। ইতিমধ্যে দুদক রাজস্ব বোর্ডের দুই বিভাগের অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে দুদক। কয়েকজন কর্মকর্তার সম্পদ দেখে বিস্মিত দুদক কর্মকর্তারা। দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

    দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, পুলিশ, এনবিআরসহ অনেক সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ যাই আসুক, নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। আমরা কারো জন্য বিশেষ কিছু করছি না। কেউ আমাদের শত্রু বা বন্ধু নয়। সবার জন্য সমান আইন, আইনি চিকিৎসা।

    জানা গেছে, এনবিআরের অধীনে আয়কর ও শুল্ক বিভাগে কিছু পদ খুবই আকর্ষণীয়। ওই পদে পদোন্নতি পেতে দুই দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে লড়াই চলছে। শুল্ক বিভাগ, চট্টগ্রাম ও ঢাকা কাস্টমস, বেনাপোল শুল্ক স্টেশন, কমলাপুর আইসিডি, শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর, বৃহৎ করদাতা ইউনিটসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বদলির তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। এসব জায়গায় দুর্নীতির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা পাওয়া সম্ভব বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। এই কারণে, এই ‘লোভনীয়’ জায়গায় অবস্থান পেতে অনেক জ্বালানি কাঠ পোড়াতে হয়; অনেককে ‘ম্যানেজ’ করতে হয়।

    সম্প্রতি এনবিআরের তিন কর্মকর্তার দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছে। এর মধ্যে ছাগলকার পর মতিউর রহমানের বিপুল সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসে। কর ক্যাডারের কর্মকর্তা ও এনবিআরের প্রথম সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের অবৈধ সম্পদের তথ্য সামনে এসেছে। এ ছাড়া একটি বড় করদাতা ইউনিটের কমিশনার হিসেবে অবসর-পরবর্তী ছুটিতে (পিআরএল) থাকা ওয়াহিদা রহমান চৌধুরীর দুর্নীতির বিষয়টিও সামনে আসে। চারটি মোবাইল কোম্পানিকে প্রায় ১৫৩ কোটি টাকার সুদ ছাড়ের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে দেশ ছাড়তে নিষেধ করা হয়েছে। এ ছাড়া মতিউর রহমানের দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদালত। তার বিরুদ্ধে একক নির্বাহী সিদ্ধান্তে ১৬টি নথিতে বেআইনিভাবে ১৫২ কোটি ৮৯ হাজার ৩৯০ টাকা বকেয়া সুদ মওকুফ করে সরকারের আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ রয়েছে।

    ফয়সালের শাস্তি দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে এনবিআর কর ক্যাডারের কর্মকর্তা ও প্রথম সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালকে গতকাল বগুড়া কর অঞ্চলের পরিদর্শক রেঞ্জ-১-এ বদলি করা হয়েছে। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন বগুড়া কর অঞ্চল পরিদর্শক রেঞ্জ-১ অতিরিক্ত কর কমিশনার মোঃ মনিরুজ্জামান। তবে আবু ফয়সালকে বগুড়ায় বদলি করায় খোদ এনবিআর কর্মকর্তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পরও অসাধু কর্মকর্তাদের এমন ‘শাস্তি’ দিয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে। স্থানান্তর ছাড়াই সাসপেনশন করা যেতে পারে।

    ফয়সাল গতকাল নির্ধারিত সময়ে অফিসে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তা করেননি বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, গতকাল তিনি নৈমিত্তিক ছুটিতে ছিলেন।

    ফয়সালের দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ ও অর্থের মালিক হওয়ার খবর কয়েকদিন ধরেই ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। দুদকের অনুসন্ধানে তার বিপুল আর্থিক সম্পদের খবর বেরিয়ে আসে। মধ্যম সারির একজন কর্মকর্তা কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন তা নিয়ে দেশজুড়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আবু মাহমুদ ফয়সালকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।