আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে বিএনপির নতুন পরিকল্পনা
আগামীতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে পরিকল্পিত পথেই চলতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে ভারত ও চীনসহ পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে দলটির পররাষ্ট্র কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে অভিজ্ঞ নেতাদের পাশাপাশি তরুণরাও রয়েছেন। এছাড়াও বিতর্কিত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতার কারণে আগের কমিটির কয়েকজন সদস্যকে অপসারণ করা হয়েছে। কমিটিতে আরেক নেতাকে রাখা হলেও শীর্ষ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকজন নেতার সন্তানকে কমিটিতে রাখা হয়েছে, যারা বিদেশে পড়াশোনা করেছেন এবং বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। এ নিয়ে দলের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
এর আগে, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর, বিএনপি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে ২১ সদস্যের একটি পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি করে।
দলটির একজন শীর্ষ নেতা বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ঢাকায় তাইওয়ানের কনস্যুলেট খোলার কারণে বন্ধু দেশ চীনের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ঘটনার জন্য তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে দায়ী করা হয়। সেই থেকে আমির খসরু চীনের অপছন্দের তালিকায় রয়েছেন।
এদিকে গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আন্দোলন পর্যালোচনায় উঠে আসে বিএনপির কূটনৈতিক ব্যর্থতার বিষয়টি। বিষয়টি আমলে নেন বিএনপির শীর্ষ নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিভিন্ন ফোরামে পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি গঠনের প্রস্তাবও দেন দলটির নেতারা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। অবশেষে এই কমিটি গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির এক নেতা। তার পরামর্শ অনুযায়ী তারেক রহমান নিজেকে পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান করে ১৫ জুন নতুন কমিটি ঘোষণা করেন।
নতুন কমিটিতে নিয়োগ পাওয়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি। বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে এই কমিটি করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্কের বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির দায়িত্বে রয়েছেন। এরপর আছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান। তারা দুজনই এই কমিটিতে নতুন। দলের একাধিক নেতা মনে করেন, আবদুল মঈন খান যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্য। তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য ওইসব দেশে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। আর নজরুল ইসলাম খান বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সাথেও যুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া ড্রাফট তৈরিতে দলে তার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
নতুন কমিটিতে তিন নম্বরে রাখা হয়েছে আগের কমিটির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে। চীনের সাথে বৈরী সম্পর্ক থাকলেও প্রতিবেশী ভারতের সাথে এর সুসম্পর্ক রয়েছে। তবে বাদ পড়েছেন আগের কমিটিতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তার সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
নতুন কমিটিতে যোগ দিয়েছেন সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী। তাদের মধ্যে আলতাফ হোসেন চৌধুরীর চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। মিন্টুর সঙ্গে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক এবং নিতাই রায়ের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুবই মজবুত। নতুন কমিটিতে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সভাপতি তাজভীরুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
‘চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির বিশেষ সহকারী’ সদস্যরা হলেন- শামা ওবায়েদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, জিবা আমিনা খান, ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন।