জাতীয়

প্রবাসীর প্লট প্রতিমন্ত্রীকে দিয়ে দিল রাজউক

এমন জানলে আমি আবেদনই করতাম না: ফরহাদ হোসেন, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী

মূলধন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রবাসীর প্লট বাতিল করে একজন প্রতিমন্ত্রীকে বরাদ্দ দিয়েছে। পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পের ৩০০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা ধরে প্লটটি অবস্থিত। ১০ কাঠা প্লটের বাজার মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্থ প্রবাসী এখন রাজউকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দোরগোড়ায় ঘুরছেন। তার প্লটটি পেয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ।এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন যে তাঁর বাবা একজন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। তবে তিনি প্লটটি নেননি। তিনি নিজেও প্লটটি নিতে চাননি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি রাজুকে এই চক্রান্তের জন্য আবেদন করেন। তবে তিনি রাজউকের কাউকে অন্যের প্লট বাতিল করে তা দিতে বলেননি।

ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমি রাজউকে কাউকেও বলিনি যে আমাকে ৩০০ ফুট রাস্তার পাশের ভাল জায়গায় প্লট দিতে হবে। আমাকে ১০কাঠার একটি প্লট দিতে হবে – আমি এটিও বলিনি। আমি যদি আবেদন করতাম না যদি রাজউক জানত যে এটি অন্য ব্যক্তির চক্রান্ত বাতিল করে এবং তা আমাকে দেবে। আসলে রাজউকের লোকেরা খুব দুষ্ট। তারা এই গল্পটি বলে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। প্রয়োজনে আমি এ বিষয়ে রাজউকের সাথে কথা বলব।

এ প্রসঙ্গে রাজউকের চেয়ারম্যান ও বোর্ড সদস্যরা কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন। তিনি চেয়ারম্যান সাঈদ নূর আলমের অফিসে গিয়ে কথা বলতে চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি দেখা দেননি ।তিনি তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেছেন কিন্তু ফোনটি তোলেননি। তিনি পাঠ্য বার্তায় কোনও উত্তর দেননি। তবে রাজউকের বোর্ডের সদস্য (সম্পত্তি ও জমি) মুনির হোসেন খান বলেন, গত বোর্ড সভায় প্রতিমন্ত্রীকে একটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা সঠিক ছিল। তবে কোন প্লট দেওয়া হয়েছে, দলিল না দেখে বলা যায় না। যদি কারও প্লট বাতিল হয়ে যায় এবং দেওয়া হয়, প্রয়োজনে সেই ব্যক্তিকে সহায়তা করা হবে, যাতে সে বঞ্চিত না হয়।

জানা গেছে, রাজধানীর বি -১২ / ২ খিলক্ষেতের বাসিন্দা আবুল কাশেম মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ডাকোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক। রাজুর আবেদনের ভিত্তিতে ২০০২ সালে তাকে প্লট নং ৩৫, রোড নং ১০৩, সেক্টর ৫, পূর্বাচল উপশহরের প্লট বরাদ্দ পান। ইতোমধ্যে তিনি কিস্তির সমস্ত অর্থ পরিশোধ করে দিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি যখন দেশে প্লটটি রেজিস্ট্রেশন করে প্লটটি বুঝতে নিতে চান, তখন তাকে জানানো হয় যে প্লটের ফাইলটি অদৃশ্য হয়ে গেছে। পরে তিনি পাভেল নামের এক পিয়ন থেকে ৩০,০০০ টাকার বিনিময়ে হারিয়ে যাওয়া ফাইলটি উদ্ধার করেন। তিনি রেজিস্ট্রেশন করতে চাইলে তাকে জানানো হয় যে পুরো অর্থ প্রদান করা হলেও একটি কিস্তি দিতে কিছুটা দেরি হয়েছিল। এই জন্য অ্যাকাউন্টিং শাখার মতামত প্রয়োজন। তারপরে হঠাৎ করে রাজউকের ০৪-২০২০ তম বোর্ড সভায় প্লটটি বাতিল হয়ে যায়। সেখানে বলা হয়, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থতার কারণে বরাদ্দ বাতিল করা হয়। আবুল কাশেমকে ১৫ ই অক্টোবর একটি চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়।

প্লট বাতিল হওয়ার বিষয়ে জানতে পেরে আবুল কাশেম তার পক্ষে সমস্ত নথিপত্র নিয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান-বোর্ড সদস্যদের কাছে যান। তারা তাকে আশ্বাস দেয় যে একটি ভুল হয়েছে। এটা ঠিক করা হবে। তবে রাজউকের লোকেরা এটি ঠিক করার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন। একপর্যায়ে আবুল কাশেম হাইকোর্টে যোগাযোগ করেন। রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত আবুল কাশেম মোহাম্মদ সাইফুল্লাহকে এই প্লটটি ব্যাখ্যা করার নির্দেশনা দেয়। কিন্তু রাজউক আদেশটি মানতে রাজি হয়নি। তিনি জানিয়েছিলেন যে এটি ফাইলের সাথে সংযুক্ত হবে যখন এটি ডাকযোগে আদালত থেকে আসে। এর পরে, আদালতের আদেশ ডাকযোগে রাজউকের কাছে পৌঁছেছিল, কিন্তু রাজউক এটিকে ফাইলটিতে যুক্ত না করে রেখে দিয়েছে।

এর আগে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন একটি প্লটের জন্য রাজউকে আবেদন করেছিলেন। রাজউকের চেয়ারম্যানসহ বোর্ডের সদস্যরা তাকে ভাল জায়গায় বড় প্লট দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। প্রতিমন্ত্রীর অনুরোধে গত ০৬/২০২০ বোর্ডের সভায় রাজউক প্লট বরাদ্দ বিধিমালার ধারা ১৩ / ক এর ​​অধীনে ফরহাদ হোসেনকে প্লট বরাদ্দ দেয়। নিবন্ধ অনুসারে, রাজউক তার উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ, রাজউক গুণী লোকদের ঢাকায় থাকার মতো জমি বা ফ্ল্যাট না থাকলে তাদের জন্য প্লট বরাদ্দ করতে পারে। একই বোর্ড সভায় রাজউকের চেয়ারম্যান সাঈ নুর আলম উত্তরা তৃতীয় পর্যায়ে পাঁচ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ নেন। এরপরেই রাজউক আদালতের আদেশের ফাইল যুক্ত করেন।

 

মন্তব্য করুন