বিবিধ

পিয়ন আলী থেকে ‘পাওয়ার আলী।গৃহকর্মী হিসাবে শুরু করে তিনি এখন ৫০০ কোটি টাকার মালিক

১৯৯৪ সালে তিনি কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর গৃহকর্মী হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। আলী প্রকাশ। তিনি কক্সবাজারের পিএমখালী ইউনিয়নের গোলরপাড়া গ্রামের দরিদ্র নৌকোর মাঝি ইলিয়াস প্রকাশ ওরফে কালুর ছেলে। ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী তাকে ৮০০ টাকা বেতনে বাড়ির কাজে লাগিয়ে দেন।দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে, তাকে কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্সে কখনও বা পিয়ন হিসাবে ঘরের কাজ করে তার পরিবারের ভরণপোষন করতে হয়েছে তাকে।

মোঃ আলী এখন প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মালিক। তিনি ১০ বছরে এত টাকা হয়েছে। তিনি ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার শহরের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দুটি বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। চট্টগ্রাম নগরীতে রয়েছে আরও এক বিলাসবহুল বাড়ি, বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট, একটি গ্রামের বাড়িতে ৩০০বিঘা জমি, দুগ্ধ ও হাঁস-মুরগির খামার কয়েক বিঘা জমিতে, বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য এবং নামবিহীন সম্পদের বিশাল সম্পদ।

একজন দরিদ্র ব্যক্তি কীভাবে মাত্র ১০ বছরে এত সম্পদের মালিক হতে পারে? তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগে জানা গেছে, দুদকের মাধ্যমে, প্রতারণা ও প্রতারণার মাধ্যমে সবকিছুই এসেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসা করার অভিযোগও রয়েছে। প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তার সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতার পরিচয় দিয়ে তিনি বিভিন্ন তদবিরমূলক ব্যবসা ও পেশাও চালিয়েছেন। আলী। তিনি নিজেকে কখনো হিলারি ক্লিনটন-বারাক ওবামার বন্ধু ; কখনও  ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছের মানুষ কারো কাছে, দুদকের চেয়ারম্যানের কাছের লোক হিসাবে পরিচয় দিয়ে বেড়ান। এলাকায় অবশ্য তাঁর নাম ‘পাওয়ার আলী’ হয়ে গেছে।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, কয়েক বছর আগে গৃহকর্মী ও পিয়ন মো: আলির বহরছড়া বিমানবন্দর সড়কের কাছে কক্সবাজার শহরের পূর্ব পাশে একটি চারতলা বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে, যার মূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। তিনি এই বাড়িতে তাঁর প্রথম স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে থাকেন। তিনি কক্সবাজার পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের কস্তুরাঘাটের অ্যান্ডারসন রোডে পাঁচ কাঠা জমিতে দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাতুল কেয়া মুনমুনের জন্য দ্বৈত বাড়ি নির্মাণ করেছেন। ২০১১ সালে কেনা বাড়ির বাজার মূল্য প্রায় ছয় কোটি টাকা। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, চট্টগ্রামের ৩৫০ এক্সেস রোডে একটি ১০ তলা বিল্ডিং রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।

তার নিজের গ্রামে যেখানে কুঁড়েঘর রয়েছে, তিনি সদর উপজেলার পিএম খালি ইউনিয়নের গোলারপাড়ায় দুই একর জমিতে পাঁচ কোটি টাকার –বাড়ি নির্মাণ করেন। কক্সবাজার শহরের কলাতলী ও বাইপাস সড়কে তাঁর তিনটি এবং ঢাকায় আরও দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভা ও এর প্রধানমন্ত্রী খালি ইউনিয়নের ৩০ একর নামহীন জমি রয়েছে  চট্টগ্রামে ১০একর রয়েছে।

কোটি টাকার ছয় বিঘা জমিতে নির্মিত খামারে ২০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করেছেন। মেসার্স নামে তাঁর একটি ব্যবসা আছে। আরও জানা গেছে, শহরের রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ডের মালিক শফিকুর রহমান উচ্চ সুদে চার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।

শুধু দেশেই নয়, দুবাই, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরেও আলির বিরুদ্ধে হুন্ডির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী মুনমুনের বাবা মোহাম্মদ শামসু ছিলেন পেশায় ফিশমনগার। নগরীর ঘোনারপাড়া এলাকার মহেশখালীপাড়ায় খাস জমিতে কাঁচা ঘর ছিল। সেই জমিতে মো।:আলীর অর্থ দিয়ে ভবন তৈরি করা হয়ে।

মোঃ আলি ৩৫ লাখ টাকার একটি টয়োটা প্রিমিও চালান। কক্সবাজারে ইয়াবার ব্যবসা যখন ফুরফুরে হয়। আলী কিছু দিন পর পরই বিমানে কক্সবাজার-ঢাকায় যাতায়াত করতেন। যদিও বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত ছিল, তবে তিনি ভিআইপি বা সিআইপি না হয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করেন।

মন্তব্য করুন