• বাংলা
  • English
  • রাজনীতি

    গ্রেফতার এড়াতে চট্টগ্রামে বিএনপির কৌশল

    গত ২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয় তালাবদ্ধ রয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে হরতাল-অবরোধ ডাকলেও কার্যালয় খোলেনি বিএনপি। সেখানে কোনো নেতাকে দেখা যায়নি। তবে তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, আন্দোলনে গ্রেফতার এড়াতে নেতারা প্রকাশ্যে আসছেন না।

    এদিকে রাজপথ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত সমাবেশ করছে আওয়ামী লীগ। তারাও কর্মসূচির পরিধি বাড়াচ্ছে।

    গতকাল রোববার দুপুর ২টায় নগরীর বিএনপি কার্যালয়ে গিয়ে দেখি প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচির বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত ব্যানার এবং অনেক কেন্দ্রীয় নেতার ছবি ভবন ও ভবনের চারপাশে ঝুলছে।

    এ সময় সেখানে একজন শ্রমিককেও দেখা যায়নি। শুধু তাই নয়, অফিসের দায়িত্বে থাকা কেয়ারটেকারকেও পাওয়া যায়নি।

    কার্যালয়ের সামনের নূর আহমদ সড়কে নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি। বিএনপি কার্যালয় থেকে কয়েকশ গজ দূরে প্রবেশপথের ডান পাশে ১৮-২০ পুলিশ সদস্যকে বসে থাকতে দেখা যায়।

    ফুটপাতের বাঁ পাশে মোহাম্মদ আলম নামে পান-সিগারেটের দোকানদার। বেলা আড়াইটার দিকে তিনি বলেন, আজ (গতকাল) সকাল ১০টা থেকে এখানে আছি। এখন পর্যন্ত কাউকে দেখিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, (গত ২৯ অক্টোবর) সেদিনের পর থেকে তাদের কাউকে দেখিনি।

    এর আগেও অনেক নেতাকর্মী আসতেন।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম নগর বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানান, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় দলীয় সম্মেলনকে ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনার পর মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরপর থেকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির অনেক নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে যান। পরদিন ২৯ অক্টোবর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্করের বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ ছাড়া বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে দেড় শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

    বিএনপির দুই দিনের অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় ধাপ গতকাল শুরু হয়েছে। ওইদিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ছিল।

    দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে চট্টগ্রাম নগরীতে দেড় শতাধিক গ্রেপ্তার হলেও তাদের অধিকাংশই থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ের কর্মী। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে নগর কমিটির একজন সদস্যও রয়েছেন।

    চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্করসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। দলটির নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় অনেক নেতার বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার এড়াতে চট্টগ্রামে বিএনপি নেতারা কৌশল নিয়েছেন। এ কারণে প্রকাশ্যে দেখা যায় না।

    জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মো: ইদ্রিস আলী গতকাল বলেন, হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে আমাদের দলীয় কার্যালয়ে কোনো কর্মসূচি ছিল না। তাই কেউ যায়নি। আজ (গতকাল) চট্টগ্রামে কেন্দ্র ঘোষিত হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।

    তিনি আরও বলেন, ‘রাস্তায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। এর পরও আমরা নানা কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করছি। আরো কঠিন কর্মসূচি আসছে। সবাই যাতে গ্রেফতার না হয় সেজন্য আমাদের নেতারা নির্দেশনা দিচ্ছেন। তারাও যেকোনো সময় কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে পারে।

    সরকারবিরোধী কর্মসূচির বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশের কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে সক্রিয় আওয়ামী লীগ। সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচি মোকাবিলায় ক্ষমতাসীন দল চট্টগ্রামে আরও মিছিল, সভা-সমাবেশ করবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

    জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে বিএনপি নেতারা চট্টগ্রামের রাজপথ থেকে দূরে থাকেন, এমনকি তাদের দলীয় কার্যালয়েও যাননি। নগরীতে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে।সরকার বিরোধী আন্দোলন কর্মসূচির নামে আবারও স্বাধীনতা বিরোধীদের আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।চট্টগ্রামে বিএনপি-জামায়াতকে আর মাঠে নামতে দেয়া হবে না।আমরা থাকব। চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এবং জনগণের জানমাল রক্ষায় রাজপথে থাকব।