চাহিদার তুলনায় আলু উৎপাদন বেশি তবুও দাম চড়া
দেশে প্রচুর পরিমাণে আলু উৎপাদন হলেও বাজারে এর দাম চড়া। আলু কিনতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খুচরা বাজারে আলুর দাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি নির্ধারণ করলেও তা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আলুর দাম বাড়ানোর কোনো কারণ নেই, বরং তা সহনীয় পর্যায়ে থাকা উচিত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা ৮৫ থেকে ৯০ লাখ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে প্রায় এক কোটি ১২ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। সে অনুযায়ী দেশে আলু মজুদের উদ্বৃত্ত থাকতে হবে। ফ্রিজারে পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
কৃষি খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবছর আলুর দাম মূলত ফ্রিজার পর্যায়ে হেরফের হয়। এতে ভূমিকা রাখেন ফারিয়া, হিমাগার (কোল্ড স্টোরেজ) মালিক ও আড়তদাররা। সম্প্রতি জাতীয় ভোক্তা সুরক্ষা অধিদপ্তরের অভিযানে ফ্রিজার স্তরে কারসাজির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
কৃষি অধিদপ্তরের ভূপৃষ্ঠ বিভাগের পরিচালক তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, দেশের ইতিহাসে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়েছে।
বর্তমানে দেশে আলুর কোনো অভাব নেই।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন আরও জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন হিমাগারে যে পরিমাণ আলু মজুত রয়েছে, তা ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত থাকবে।
বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো প্রতি কেজি আলুর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩৫-৩৬ টাকা নির্ধারণ করলেও খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। হিমাগার থেকে পাকা রশিদে ২৬ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির কথা থাকলেও হিমাগার থেকে আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৭ টাকায়। সরকার নির্ধারিত দামে কোল্ড স্টোরেজ ও খুচরা কোথাও আলু বিক্রি হচ্ছে না।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সারাদেশে কোল্ড স্টোর, পাইকারি ও খুচরা বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু এবং অন্যান্য পণ্য বিক্রয় কার্যকর করার জন্য একটি অভিযান পরিচালনা করেছে।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘ফ্রিজার থেকে ২৭ টাকায় আলু সরবরাহ করা গেলেই সরকার নির্ধারিত দামে বাজারে কেনা-বেচা সম্ভব। এ জন্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগ সমন্বয় করে কাজ করছে। তিন-চার দিনের মধ্যে নির্ধারিত দামে আলু কেনা-বেচা না হলে বিদেশ থেকে আলু আমদানির জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়ার সুপারিশ করা হবে।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেছেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন ৮.৫ মিলিয়ন টনের বেশি নয়। এবার ফ্রিজারের ২০ শতাংশ স্টোরেজ স্পেস খালি ছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৩ লাখ ১২ হাজার টন আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৪ লাখ ১৯ হাজার ৭৬০ টন হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে হিমাগারে এক লাখ সাত হাজার ২৩৪ টন আলু কম মজুদ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি মৌসুমের শুরুতে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রতি কেজি আলু ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করেছেন কৃষকরা। জুলাই থেকে এ পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হতে শুরু করে। উৎপাদন মৌসুমে আলুর পর্যাপ্ত দাম পান না কৃষক। কিন্তু পরবর্তীতে যখন কৃষকের হাতে উৎপাদিত পণ্য থাকে না তখন মজুতদাররা সিন্ডিকেট করে বাজার অস্থিতিশীল করে।
আলু উৎপাদনে দেশের শীর্ষ জেলাগুলোর মধ্যে বগুড়া অন্যতম। গত মৌসুমে জেলায় ১২ লাখ ২৪ হাজার ৩৪২ টন আলু উৎপাদিত হয়েছিল। বগুড়ায় আলু রাখার জন্য ৪২টি হিমাগার রয়েছে। একটি ফ্রিজার বন্ধ। এসব ফ্রিজারের ধারণক্ষমতা তিন লাখ ৭৪ হাজার ৬২৯ টন। এ বছর দুই লাখ ৪২ হাজার ২৮৮ টন আলু মজুদ করা হয়েছে। একই সময়ে মজুদ করা হয়েছে ৮৫ হাজার ৯০৪ টন বীজ আলু।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বগুড়ার সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মমতাজ হক জানান, বগুড়ায় এ পর্যন্ত ৮৫ হাজার ৩৯৪ টন ভোজ্য আলু মজুদ রয়েছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাতলুবর রহমান জানান, বগুড়ায় এ বছর ৫৩ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে ১২ লাখ ২৪ হাজার ৩৪২ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে।
দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলুর মজুদ রয়েছে বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী, মুন্সীগঞ্জ, জয়পুরহাট ও ঠাকুরগাঁও জেলায়।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মে মাস থেকে হিমাগার থেকে আলু ছাড়া শুরু হয়। সেপ্টেম্বরের শেষে আলু রোপণ শুরু হবে। রোপণের তিন মাস পর আলু তোলা হয়। ডিসেম্বর থেকে বাজারে নতুন আলু আসা শুরু হবে।