• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    যে  তিন ধাপে কমতে পারে ডেঙ্গুতে মৃত্যু

    দেশে ডেঙ্গুতে গত একদিনে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৯৯৩ জন। বর্তমানে নতুন রোগীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৯ হাজার ৮৭১ জন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪ হাজার ২৯৭ জন।

    ঢাকার বাইরে পাঁচ হাজার ৫৭৪ জন। রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে এমন তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

    সময়মতো তিনটি পদক্ষেপ নিলে মৃত্যু কমে যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তিনটি কাজ সঠিক সময়ে করা হলে, ডেঙ্গুর বিপদ লক্ষণ বুঝে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, রক্তচাপ কমানো, রোগীকে অন্য হাসপাতালে রেফার না করা এবং ডেঙ্গু শকে সঠিক তরল ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা করা। চার থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু অনেকটাই কমে যাবে।

    রোববার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‘ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট ডাইলেমা’ শীর্ষক মাসিক কেন্দ্রীয় সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন। সেমিনারে বলা হয়, রোগীর জ্বর ত্যাগ করার সময়ই ডেঙ্গুর জটিল সময়। জ্বর কমে যাওয়ার ৪৮ থেকে ৭২ ঘন্টা পরে রোগীর জটিল সময়কাল। কারণ এ সময় রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।

    এমনকি রোগীর প্লেটলেট ১০,০০০ এর নিচে নেমে গেলেও রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন নেই, যদি এটি করা হয় তবে প্লেটলেট নয়, রক্ত (পুরো রক্ত) স্থানান্তর করা ভাল।

    ডেঙ্গুতে আলাদা করে পেঁপে, পেঁপের পাতা, পেঁপের রস, ড্রাগন ফল, বেদানা ইত্যাদি খাওয়ার দরকার নেই। ডেঙ্গু রোগীদের ব্যবস্থাপনায় খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। সিবিসি পরীক্ষাই যথেষ্ট। সিবিসি পরীক্ষার মধ্যে, ডাব্লুবিসি গণনা এবং হেমাটোক্রিট গণনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

    হাসপাতালে ভর্তির ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৬০ শতাংশ মারা যায়

    বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাপ্তাহিক পর্যালোচনা অনুসারে, ডেঙ্গুতে ৬০ শতাংশ মৃত্যু হাসপাতালে ভর্তির ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘটে। ২৪ শতাংশ মারা গেছে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে, ৪ শতাংশ চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে, ৭ শতাংশ ছয় থেকে ১০ দিনের মধ্যে এবং ১ শতাংশ ১০ দিনের বেশি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে। ওই পর্যালোচনা অনুযায়ী, মৃত রোগীদের ৬৪ শতাংশের মধ্যে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রসারিত ডেঙ্গু ২৪ শতাংশ। ৮০ শতাংশ ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার। আর মৃতদের মধ্যে ৪ শতাংশের ডেঙ্গুসহ অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগ ছিল।

    সেমিনারে ‘ডেঙ্গু সংক্রমণ ব্যবস্থাপনা: টিপস অ্যান্ড ট্যাকটিকস’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পেডিয়াট্রিক অ্যাসপেক্ট অ্যান্ড ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফজলে রাব্বি চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রচণ্ড পেটে ব্যথা, প্রচণ্ড বমি, মাথা ঘোরা বা প্রচণ্ড দুর্বলতা, কোনো কারণে পাকস্থলীতে তরল পদার্থ, ফুসফুসে তরল পদার্থ, প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট, রক্তপাত—সেটি কাশির সঙ্গে হোক বা প্রস্রাব ও মলত্যাগের যেকোনো দিক থেকেই হোক। এগুলো ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বিপদ সংকেত। এগুলো বুঝে রোগীকে দ্রুত চিকিৎসা করাতে পারলে মৃত্যু অনেকটাই কমানো যায়।

    ডাঃ ফজলে রাব্বি চৌধুরী বলেন, গর্ভবতী মা, ক্যান্সার রোগী, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও কিডনি প্রতিস্থাপন ডেঙ্গু রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নিতে হবে। এটা মনে রাখা উচিত যে তাদের ঝুঁকি অন্যান্য রোগীদের তুলনায় অনেক বেশি।

    তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীর রক্তচাপ কমে গেলে তাকে ডেঙ্গু শক বলি। এই রোগীদের রেফার করা হলে তাদের বাঁচানো যাবে না। কারণ তাদের আগামী চার থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে তরল, স্বাভাবিক স্যালাইন দিয়ে ম্যানেজ করতে হবে। এ সময় রোগীকে রেফার করলে সে অ্যাম্বুলেন্সে বা পথে মারা যাবে। আমাদের জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে এই সক্ষমতা রয়েছে। তাই সেখানে চিকিৎসা দিতে হবে। নইলে মৃত্যু ঠেকানো যাবে না।’

    সেমিনারে বিশেষজ্ঞ প্যানেল হিসেবে ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। কারণ শিশুরা পরিষ্কার করে বলতে পারে না তাদের শরীরে কোনো সমস্যা আছে কিনা। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিশুদের বাইরে স্বাভাবিক দেখা যেতে পারে, কিন্তু শিশুরা যে কোনো সময় ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে যেতে পারে। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, যাতে যেকোনো সমস্যা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

    ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুকে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে দেখতে হবে। তাকে একটি শিশু হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কারণ শিশুর শরীরের তরল ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। দেখা যায় স্যালাইনের পরিমাণ বেশি হলে শিশুর ফুসফুসে পানি প্রবেশ করবে, পেটে পানি আসবে। আমরা যদি কম তরল দেই তাহলে আবার পানিশূন্যতার কারণে শক খেয়ে মারা যাবে। বিষয়টি বুঝতে হলে বারবার রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ করতে হবে, শিশু খাচ্ছে কি না; না খেলে কতটা তরল বদলাতে হবে তা বোঝা উচিত।